মাগুরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ভুয়া বিল ভাউচার : সাড়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় অভিযুক্তরা যে কোন সময় আটক হতে পারে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাগুরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সাড়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের দায়ের করা মামলার আসামি কর্মরত পুলিশ সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে রয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের পর তারা যে কোনো সময় দুর্নীতির এই মামলায় গ্রেফতার হতে পারেন। এছাড়া অন্য আসামিদেরও গ্রেফতার করা হবে। দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ১০ কোটি ৪৪ লাখ ১ হাজার ৩৪৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কর্মরত ১০ জন ও অবসরপ্রাপ্ত ৬ জন পুলিশ সদস্যসহ মোট ২৭ জনকে আসামি করে গত সোমবার দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ে মামলা করা হয়। দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজ ইকবাল এই মামলা করেন। ওই দফতরের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত জানান, আগে তারা দুর্নীতির মামলা পুলিশের থানায় করতেন। কিন্তু এখন তাদের দফতরেই মামলা দায়েরের নির্দেশনা হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত ১৬ জন পুলিশ সদস্যসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে মামলা করেছেন তার নথিপত্র মাগুরার জজ আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ঘটনাস্থল মাগুরা হওয়ায় সেখানকার আদালতেই বিচার কাজ চলবে। এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন স্থানে কর্মরত মামলার আসামি পুলিশ সদস্যরা ঘটনার সময় মাগুরায় কর্মরত ছিলেন। তিনি আরও জানান, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে তাদের সদর দফতর থেকে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হলে তিনিই তদন্ত কাজ পরিচালনা করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন স্থানে কর্মরত মামলার আসামি পুলিশ সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে রয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হলে তারা যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন। দুদকের দায়ের করা ওই মামলার আসামিরা হলেন-মাগুরা জেলা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল গাজী মশিউর রহমান (৬৫৮), ফিরোজ হোসেন (৪৭৭), শিপন মৃধা (৮৫৮), সাতক্ষীরা দেবহাটা থানায় কর্মরত এসআই হাসিনা খাতুন, যশোরের বাঘারপাড়া থানায় কর্মরত এসআই মো. সবুর আলম খান, যশোর পুলিশ লাইন্সে কর্মরত এসআই মাহাবুব আলম, মাগুরা পুলিশ লাইন্সের সাবেক এসআই (অবসরপ্রাপ্ত) সাইফুর ইসলাম, বর্তমানে কর্মরত কনস্টেবল তাসলিমা খাতুন (৬০৬) কনস্টেবল হালিমা (৫৩৬), নড়াইলের লোহাগাড়া উপজেলার মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের ইসহাক মুন্সির ছেলে আজমল মুন্সি, মাগুরা সদর উপজেলার সাজিয়ারা গ্রামের শাহাদাত হোসেনের মেয়ে রোকাইয়া ইয়াসমিন বিচিত্রা, মাগুরা জেলার সাবেক হিসাবরক্ষক বর্তমানে খুলনার আরআরএফে কর্মরত শরিফুজ্জামান, মাগুরা জেলার সাবেক হিসাবরক্ষণ ও ফিন্যান্স কর্মকর্তা বর্তমানে যশোরে কর্মরত জি এম জিল্লুর রহমান, মাগুরা জেলার সাবেক হিসাবরক্ষণ ও ফিন্যান্স কর্মকর্তা বর্তমানে গাইবান্ধায় কর্মরত সাইফুল ইসলাম ও জয়পুরহাটে কর্মরত সরকার রফিকুল ইসলাম, মাগুরা জেলা হিসাবরক্ষণ ও ফিন্যান্স কর্মকর্তার কার্যালয়ের অডিটর আজমল হোসেন, অডিটর আব্দুল লতিফ মিঞা, অডিটর রথিন বিশ^াস, অডিটর ফজলুর শহিদ, মাগুরার শালিখায় কর্মরত অডিটর শেখ আব্দুস সালাম, মাগুরা জেলা পুলিশ লাইন্সের সাবেক এএসআই (অবসরপ্রাপ্ত) আতিয়ার রহমান, এএসআই (অবসরপ্রাপ্ত) শাহআলম গাজী, টিএসআই (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল হাই, কনসটেবল (অবসরপ্রাপ্ত) কৃষ্ণপদ বিশ^াস, কনস্টেবল (অবসরপ্রাপ্ত) আকবর আলী, কনস্টেবল (অবসরপ্রাপ্ত) আবুল কাশেম মাগুরার সাবেক ও বর্তমানে ঝিনাইদহে কর্মরত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী। দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত জানান, উল্লিখিতরা পরস্পর যোগসাজসে মাগুরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে বিগত চারটি অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর চলতি বছরের প্রথম থেকে এই অনুসন্ধান শুরু করা হয়।