ভরা মৌসুমে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানিতে হতাশ যশোরের চাষিরা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা বৃষ্টিতে এবছর যশোরে নানা জাতের সবজির পাশাপাশি কাঁচা মরিচ ক্ষেতের ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এ অবস্থায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে কাঁচা মরিচের চাহিদা ও দাম বেশি হয়। এতে কৃষক অনেকটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় থাকলেও হঠাৎ ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির খবরে তাদের মাথায় হাত উঠেছে। কৃষকের দাবি ভরা মৌসুমে দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ভারত থেকে মরিচ আমদানি করায় দাম না পেয়ে তারা নিশ্চিত আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় মরিচ আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, যশোর জেলায় চলতি মৌসুমে ৬৫৫ হেক্টর জমিতে নানা জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। চাষের উপযুক্ত সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলনও ভালো হয়। তবে গত কয়েকদিনে অতি বর্ষণের কারণে সবজি ক্ষেতের পাশাপাশি মরিচ ক্ষেতেরও বেশ ক্ষতি হয়। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় কিছুটা চিন্তায় পড়লেও বাজারে চাহিদা ও দাম একটু বেশি পেয়ে খুশি ছিলেন তারা। তবে সরকার সম্প্রতি দেশের মরিচের চাহিদাপূরণের লক্ষ্যে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করায় কৃষক তাদের উৎপাদিত মরিচের কাঙ্খিত দাম না পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। কৃষি বিভাগের সূত্রে জানাগেছে, দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরা রাখার পাশাপাশি ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর আবার মরিচ আমদানি শুরু করেছে। এরই ধারবাহিকতায় গত ৬ দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭৮ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ এসেছে। গত ৯ আগস্ট ১২ মেট্রিক টন দিয়ে আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। কৃষক বলছে, প্রতিবছর বৃষ্টির সময়ে মাত্র কয়েকদিনের জন্য বাজারে মরিচের দাম একটু বাড়তি থাকে। এসময় কৃষকরা একটু দাম বেশি পেয়ে লাভের মুখ দেখতে থাকেন। কিন্তুভরা মৌসুমে ভারত থেকে মরিচ আমদানি করায় বাজারে তাদের উৎপাদিত মরিচের কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলার সদর উপজেলার নোঙরপুর এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, মরিচ আমদানির বিষয়ে আমরা বিরোধিতা করছি তা নয়। তবে কষ্ট হচ্ছে আমাদের ক্ষেতের মরিচ যখন বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে উৎপাদন কমে যাচ্ছে ঠিক তখন সরকার মরিচ আমদানি করছে ভারত থেকে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি মরিচে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এক কেজি বেগুন যদি ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হয়, তাহলে এক কেজি মরিচ ১০০ টাকা বিক্রি হলে অসুবিধা কী? একই কথা বলেন ওই এলাকার সবজি চাষি আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে বৃষ্টির আগে ও পরবর্তীতে দামের এই ওঠানামা দেখে আসছি। দাম কম হলে কৃষকের লোকসান হয়, আর বেশি হলে লাভ হয়। অথচ এসব সংকটকে পুঁজি করে সরকার বিদেশ থেকে মরিচ আমদানি করে কৃষকের ক্ষেতের ফসলের দাম কমিয়ে দিচ্ছে। তবে আমদানিকৃত ভারতীয় মরিচ নিয়ে কৃষক হতাশ হলেও এর কোনো প্রভাব চাষি পর্যায়ে পড়বেনা বলে দাবি করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে মরিচ ক্ষেতে পানি জমে অনেক স্থানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর কারণে মরিচের উৎপাদন কমে দাম বেড়েছে। এসব দিক বিচেনায় বাজারে সরবরাহ ধরে রাখা ও দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, কৃষক হতাশ হচ্ছেন, তবে এ পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে। বৃষ্টি কমে গেলে মরিচের উৎপাদন বাড়বে। আর তখন তারা কাঙ্খিত দাম পেয়েই লাভবান হবেন। ফলে এ বিষয়ে কৃষককে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দেন এ কৃষি কর্মকর্তা।