যশোরে বিএনপি কার্যালয়ে ছাত্রলীগের ন্যাক্কারজনক হামলা # জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক গোলাম রেজা দুলুকে ছুরিকাঘাত

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটেছে যশোরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে। ছাত্রলীগের জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সশস্ত্র এক দল সন্ত্রাসী জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে অতর্কিত তাণ্ডব চালায়। তারা ছুরিকাঘাত করেছে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম রেজা দুলুকে। লাথি মেরে জখম করেছে যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনকে।

আহত হয়েছেন ১৫ জন। ভাঙচুর করেছে দফতরের চেয়ার টেবিল, বিএনপির করোনা হেল্পসেলের কম্পিউটার সামগ্রী, টেলিভিশন ও কার্যালয়ের সামনে থাকা নেতা-কর্মীদের ১৫টি মোটরসাইকেল।


জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে তার পরিপূর্ণ মুক্তি, সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সদর উপজেলা, নগর, সরকারি এমএম কলেজ ও সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদল দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।

দোয়া মাহফিল শেষ হওয়ার পর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে স্থাপিত করোনা হেল্প সেলে দলের জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনসহ নেতৃবৃন্দ বসেছিলেন।

এ সময় জেলা বিএনপি কার্যালয়ের উত্তর দিক থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাহউ্িদ্দন পিয়াস, সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লবের নেতৃত্বে এক দল সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র, লোহার রড নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।

এসময় তাদের মুখে ছিল জয়বাংলা স্লোগান ও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল। তারা কার্যালয়ের করোনা রেজিস্ট্রেশন সাপোর্ট সেলের ল্যাপটপ, কম্পিউটার প্রিন্টারসহ কার্যালয়ের টেলিভিশন ও চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। কার্যালয়ের সামনে থাকা দলীয় নেতা কর্মীদের অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এসময় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ পিন্টু জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম রেজা দুলুর দিকে ধারালো চাকু নিয়ে তেড়ে আসে।  এ সময় তিনি দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পাশে মসজিদ মহল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চলে আসেন। আব্দুর রউফ পিন্টু সেখানে গিয়ে গোলাম রেজা দুলুকে ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাতে তার ডান পায়ের হাঁটুর ওপরে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। সাথে সাথে রক্তাক্ত অবস্থায় গোলাম রেজা দুলুকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান দলীয় নেতা-কর্মীরা।


জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, কেন তারা এমন করছে জানতে চাইলে ‘কেক কাটিস’ বলে সন্ত্রাসীরা তার দিকে তেড়ে আসে। এসময় তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হার্টে রিং লাগানো। বলা মাত্রই সন্ত্রাসীরা তার বুকে লাথি মারে।


সন্ত্রাসীদের মারপিটে আরও আহত হন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. হাজী আনিছুর রহমান মুকুল, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মীর নূর ইমাম, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোর্তজা এলাহী টিপু, জেলা ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোশারফ হোসেন।

এদিকে, ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম গোলাম রেজা দুলুকে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তারেক শামস্ তাকে অর্থো সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। তিনি জানান, ছুরিকাঘাতে তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর তার শরীরে ৬ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। অর্থপেডিক বিভাগের কনসালটেন্ট আব্দুর রশিদ জানান, ১২ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৩ সেন্টিমিটার গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। যেটি হাড়ে গিয়ে লেগেছে। এই মুহূর্তে তার অবস্থা ভালো বলা যাবে না।

গোলাম রেজা দুলুকে হাসপাতালে দেখতে যান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। প্রায় ২০ মিনিট তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন লোকসমাজকে বলেন, জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। জড়িতদের শনাক্ত করতে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা তাৎক্ষণিক শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, এই যশোর বিএনপির যশোর। এই যশোরে কোন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী যদি মনে করে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা করে দলের নেতা-কর্মীদের মাঠ ছাড়া করা সম্ভব তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। সন্ত্রাসীরা তাদের দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে খুশি করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির এই যশোরে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। যশোরে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে যশোরের রাজনীতিকে এক নজীরবিহীন ক্ষত সৃষ্টি হলো। তিনি বলেন, বিএনপির একটি কর্মী বেঁচে থাকা পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়কে সুরক্ষা দেবে।