কতো ভাগ বাস চলছে?

0

নূরে আলম জিকু॥ সকাল সাড়ে নয়টা। কাওরান বাজারে যানবাহনের জট। বাসের হর্নের শব্দ ভেসে আসছে। সড়কের পাশে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। বিভিন্ন গন্তব্যে নাম ধরে হাঁকডাক দিচ্ছেন বাসের হেলপাররা। যাত্রী উঠছে-নামছে। বাসে যাত্রী উঠানো নিয়ে আগের মতোই প্রতিযোগিতা চলছে। যাত্রীদের মধ্যে কার আগে কে উঠবেন- তা নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ।
বেহায়াপনার অন্য রূপ
পাশাপাশি সিটে বসে আছেন যাত্রীরা। কেউ বা দাঁড়িয়ে। বাসের চালক ও সহকারীদের অনেকের মুখে নেই মাস্ক। অধিকাংশ যাত্রীর মধ্যে একই চিত্র। নেই স্বাস্থ্যবিধি। সব মিলিয়ে বুঝার উপায় নেই করোনা নামক ঘাতকের বিস্তার রয়েছে। এ যেন দীর্ঘ বছরের চেনা শহর। সবকিছু স্বাভাবিক! সড়কে বাড়ছে গণপরিবহনের সংখ্যা। বেড়েছে যাত্রী। দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। ফুটপাথে অফিসগামী মানুষের চাপ। বলা হয়েছিল অর্ধেক বাস চলাচল করবে। কিন্তু নগরে ঠিক কতো ভাগ বাস চলেছে তার কোনো হিসাব নেই। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি পুরো সংখ্যক বাসই চলেছে। অর্ধেক বাস চালানোর কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। পেলেও কীভাবে অর্ধেক বাস চলবে তা নির্ধারণ করবে কারা? ঈদ শেষে টানা ১৯ দিন পর গতকাল থেকে শিথিল হয়েছে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ। খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, দোকানপাট, শপিংমল ও বিপণিবিতান। চালু হয়েছে বাস-ট্রেন ও লঞ্চ। বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীতে বেড়েছে গণপরিবহন চলাচল। নগরীজুড়ে বেড়েছে মানুষ। স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন।
বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক অনেক কম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রীরা। নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছাতে হুড়োহুড়ি আর ঠেলাঠেলি করেই বাসে উঠছেন যাত্রীরা। কোথাও মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। কিছু কিছু বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। গণপরিবহন চলাচলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্দেশনা মানা হয়নি। পরিবহনের যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর, হেলপার কাম ক্লিনার এবং টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বাস যাত্রার শুরু ও শেষে যানবাহন পরিচ্ছন্ন করতে দেখা যায়নি। জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়নি বাসের সিট। এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা বিধিনিষেধের আগে স্বাভাবিক সময়ের মতো চলাচল করেছে। দীর্ঘদিন সড়কে বাস নামিয়ে একই রুটের বাসগুলোর মধ্যে পাল্লাপাল্লি প্রতিযোগিতা দেখা গেছে। বাসস্টপগুলোতে নিয়ম না মেনেই যাত্রীরা উঠানামা করছেন। অনেকের মুখে নেই মাস্ক। অধিকাংশ বাস স্টাফকে মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। কিছু সংখ্যক বাস সহকারীকে মাস্ক পরতে দেখা গেছে। তবে সঠিক ভাবে মাস্ক পরেনি কেউ। কারও থুতনিতে ঝুলিয়ে কিংবা হাতে নিয়ে যাত্রী ডাকছেন। সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবিধি অবহেলিত হচ্ছে বিআরটিসি বাসে। এসব বাসে চালক, হেলপারও যাত্রীদের মুখে তেমন একটা মাস্ক দেখা যায়নি। দুপুরে শাহবাগ এলাকায় দেখা যায় বিআরটিসি (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫৫৯১৩) বাসটি যাত্রী তুলছেন। চালকের মুখে নেই মাস্ক। তার সহকারী মুখের থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে যাত্রী ডাকছেন। পাশাপাশি সিটে যাত্রী বসেছেন। তাদের কয়েকজনের মুখে ছিল না মাস্ক। বিআরটিসি (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫৫৭২০) বাসের কন্ডাক্টর বলেন, সরকার যেসব শর্তে গণপরিবহন চালু করেছে সব কিছু মেনে বাস চালানো সম্ভব না। সড়কে যাত্রী কম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও মুখে মাস্ক পরে যাত্রী ডাকা যাচ্ছে না। অনেক যাত্রী মাস্ক ছাড়াই উঠছেন। শরীফ হাসান নামের এক যাত্রী বলেন, লকডাউন না থাকায় সশরীরে অফিসে যেতে হচ্ছে। রাস্তায় মানুষের সংখ্যা আগের মতোই বেড়েছে। হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর আগের ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারছি। গণপরিবহন চলাচলে ভোগান্তি কমলেও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হচ্ছে না। এখনো অনেকেই মাস্ক পরছেন না। পাশাপাশি সিটে বসছেন অথচ একজনের মুখে মাস্ক আছে আরেকজনের নেই। বাস সহকারীরা যাত্রী দেখেন, স্বাস্থ্যবিধি দেখেন না। মালিবাগ মোড়ে কথা হয় মক্কা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব-১৫০০৬৮ বাসের হেলপারের সঙ্গে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রী উঠানো প্রসঙ্গে বলেন, অনেকদিন পর গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। মাস্ক পরতে ভুলে যাই। এ ছাড়া দীর্ঘসময় মাস্ক পরে থাকা যায় না। অসুবিধা লাগে।
এদিকে গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, বাংলামোটর, ফার্মগেট, মিরপুর, বিজয় সরণি, কাওরান বাজার, উত্তরা, বনানী, মহাখালী এলাকায় যানজট দেখা যায়। বনানী থেকে কাওরান বাজার, ফার্মগেটে আসা সুলতানা বলেন, অনেকদিন পর রাজধানীতে এমন যানজট দেখলাম। গাড়ি যেন চলছেই না। বনানী থেকে ফার্মগেট আসতে দেড়ঘণ্টা সময় লেগেছে। অথচ মঙ্গলবারও সিএনজিতে ১০/১৫ মিনিটে আসছি। লকডাউন ছেড়ে দেয়ার আগের ঢাকা এখন আগের মতো লাগছে। এদিকে রাজধানীর অধিকাংশ বাস চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস টার্মিনালগুলোতে তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। সায়েদাবাস, গাবতলী, মহাখালী টার্মিনালে যাত্রী সংকটে অর্ধেক সংখ্যক বাসও ঢাকা ছেড়ে যায়নি। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউন শিথিল হলেও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যাত্রী সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ফলে লকডাউনের আগে যেভাবে বাস ঢাকা ছেড়ে যেত, এখন সেভাবে যাচ্ছে না। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ১৯ দিন বন্ধ থাকার পর শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচল। বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক যাত্রীবাহী নৌযান ঢাকা ছেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা ভিড় করেছেন সদরঘাটে। প্রতিটি লঞ্চ ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যাত্রী উঠানো হয়েছে। সরজমিন দেখা যায়, লঞ্চ স্টাফরা ডাকাডাকি করে যাত্রী তুলছেন। ছিটানো হচ্ছে না কোনো প্রকার স্যানিটাইজার। বিধিনিষেধের আগের মতোই যাত্রীরা সিট করে নিয়েছেন। কেউ বসে, কেউবা শুয়ে আবার কেউ দলবদ্ধ হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। যেন সবকিছুই চলছে আগের মতো। এদিকে বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। শতভাগ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে এসব ট্রেন। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৭টি ট্রেন ছেড়েছে। এসব ট্রেনের মধ্যে রয়েছে- বলাকা এক্সপ্রেস, তুরাগ এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, পারাবত এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস এবং মহানগর প্রভাতী। তবে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানার দাবি করলেও বুধবার সকালে টিকিট কাউন্টারে সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি।