মহাসড়কে মহাঅরাজকতা : গণপরিবহন চলেছে ইচ্ছামতো

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ লকডাউন তুলে নেয়ার পর গতকাল মহাসড়কগুলোতে যেন মহাঅরাজকতা নেমে এসেছিল। সবধরনের গণপরিবহন একসঙ্গে রাস্তায় নামায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বাস, মিনিবাস, সিএনজি, রিকশা, ব্যাটারির রিকশা, ট্যাম্পু সবধরনের যানবাহন এলোমেলোভাবে চলেছে। যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার যেন কেউ ছিল না। রাজধানী ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখে দিনের বেশিরভাগ সময় যানজটের দৃশ্য দেখা যায়। যাত্রাবাড়ীতে দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘলাইন। প্রচন্ড গরমে যাত্রীরা হাঁসফাঁস করছেন।
লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল সব গণপরিবহন একসঙ্গে রাস্তায় নামবে আগাম বার্তা ছিল। অথচ একসঙ্গে গণপরিবহন মহাসড়কে নামলে সেগুলো সামাল দেয়ার আগাম প্রস্তুতি ছিল না। ফলে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন এবং বিভিন্ন জেলাশহর থেকে ঢাকায় ফিরেছেন তাদের সড়কের বিভিন্ন স্পটে পড়তে হয় মহাভোগান্তিতে। অনেক স্পটে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঠায় দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করে সময় পাড় করছেন। কোথাও কোথাও তাদের যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা গেছে। হাইওয়ে পুলিশ দাবি করছে, মহাসড়কগুলোতে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়াতে পেট্রোল টিম, মোবাইল টিম, মোটরসাইকেল টিম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা সার্বিক অবস্থা মনিটরিং করেছেন। এছাড়াও যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেছেন। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেলটার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকার ১ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ (লকডাউন) জারি করে। তবে ৭ জুলাই কঠোর বিধিবিষেধ জারি করা হয়। ঈদ উপলক্ষে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবারও বিধিনিষেধ কার্যকর করে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। ফলে গতকাল সবকিছুই একসঙ্গে খুলে দেয়া হয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বারবার বলছেন, লকডাউন তুলে নেয়া হলেও সকলকে মাস্ক পড়তে হবে এবং মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। আবার আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলোÑ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গণপরিবহন চালু হলে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। ঈদের পর এমন চিত্র দেখা যায় এবং দেড় বছরের করোনাকালে বিভিন্ন সময় লকডাউন খুলে দেয়ার পর সে চিত্র দেখা গেছে। এবার মানুষের রুটিরুজির কথা চিন্তা করে সরকার শর্তসাপেক্ষে বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কয়েকদিন আগে সে ঘোষণা দেয়া হলেও লকডাউন তুলে নেয়ার প্রথম দিন যানবাহনের চাপ ঠেকানো ও গণপরিবহনের চলাচল সুচারুভাবে করতে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুচিন্তিত প্রস্তুতি ছিল না। যার জন্য চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকার প্রবেশ মুখ যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে, মানিকগঞ্জ থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত ৫ থেকে ৬টি পয়েন্টে, টাঙ্গাইল থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত তিন থেকে চারটি পয়েন্টে এবং ঢাকা টু ময়মনসিংহ সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে যানজট লেগে যায়। যানজটে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। রাজধানী ঢাকার কয়েকটি সড়কেও তীব্র যানজটের যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডে কোনো যানজটন ছিল না। ঢাকা-মাওয়া রোডেও গাড়ির চাপ কম ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও যানজট ছিল না। তবে ঢাকা-আরিচা রোডে একটু যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাওয়া রোড দিয়ে ভারি যানবাহন যাচ্ছে না। এছাড়াও যেখানে ১৪ থেকে ১৫টা ফেরি চলত; সেখানে মাত্র ৬টি ফেরি চলছে। এ কারণে সেই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।
কুমিল্লা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ শেষে বুধবার অনেকটাই চিরচেনা রূপে ফিরেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। সড়কে যান চলাচল বেড়েছে। তবে গণপরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা কম। হাইওয়ে পুলিশ বলছেন, দীর্ঘদিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার বুধবার সকাল থেকে মহাসড়কের প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে ভিড় রয়েছে। ফেনী থেকে ঢাকাগামী স্টার লাইন পরিবহনের চালক আনোয়ার হোসেন থেকে সড়কে অর্ধেক গণপরিবহন চলবে, এমন সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে কিছু জানেন কি না জিজ্ঞাসা করলে বলেন, মালিকপক্ষ তাদের এমন কিছুই জানায়নি। তারা বিষয়টি গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছেন। তবে রাস্তায় বাস এমনিতেই কম চলছে। ঢাকামুখী কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রয়োজন ও কর্মস্থলে যোগ দিতেই ঢাকা ফিরছেন তারা। রমজান আলী নামের এক যাত্রী বলেন, লকডাউন নেই তাই আমরা ঢাকায় যাচ্ছি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। বাড়িতে থেকে কি করব। ঢাকায় যাচ্ছি দোকান খুলতে হবে। কিন্তু আমরা তো কাজ করে খাই। কয়দিন আর বসে থাকা যায়। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী গ্রীন লাইন পরিবহনের সুপার ভাইজার মনির হোসেন বলেন, যাত্রী কম থাকায় সকাল থেকে মাত্র ১০টি বাস ছেড়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে ৩০টির বেশি বাস ছেড়ে যায়। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
সকালের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা আবু বকর বলেন, লকডাউনের আগে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করত, সেই পরিমাণ গাড়ি এখনো সড়কে নামেনি। এ কারণে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম। সময় বাড়লে যানবাহন বাড়বে। সড়কে গণপরিবহন চলাচলের কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তাদের দায়িত্ব রাস্তায় যান চলাচলের বিষয়টি দেখভাল করা। এ দায়িত্ব তারা পালন করছেন। অর্ধেক গণপরিবহন চলাচলের বিষয়টি সরকার ও মালিকপক্ষ দেখবে। বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়েকের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিধিনিষেধের আগে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মহাসড়কে তুলনামূলক কম সংখ্যক বাস চলাচল করছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী সড়কে অর্ধেক সংখ্যক বাস চলাচল করায় সকালে গণপরিবহন সংকটে পড়েছেন যাত্রীরা। সকাল থেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা ভিড় করেন মহাসড়কে। বাড়তি ৬০ শতাংশ ভাড়া প্রত্যাহার করায় বাস কন্ডাক্টররা নিচ্ছে আগের ভাড়া। ভোর থেকেই মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা দেখা যায়।
গাজীপুর : দিনের বেশিরভাগ সময় যানবাহন ধীরগতিতে চলেছে। গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে রাস্তায় বিভিন্ন খানাখন্দক ও বিআরটিএ প্রকল্পের ধীরগতির কারণে যানবাহন চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী কম থাকায় মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টঙ্গী হোসেন মার্কেট থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তায় খানাখন্দকে ভরা। অপরিকল্পিতভাবে বিআরটিএ কাজের কারণে এ দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলেছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বুধবার সরকার ঘোষিত লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবার পর যানবাহন চলাচল শুরু হলে টঙ্গীতে রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দকের কারণে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। নানান ধরনের যানবাহন রাস্তায় এলোমেলোভাবে চলাচল করলেও সেগুলো দেখার যেন কেউ ছিল না। টঙ্গীর চেরাগ আলীতে বসবাসরত নুরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা জানান, বিপি ১২২ নং পিলারের পশ্চিম পাশে রাস্তায় যে পরিমাণ খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে এতে ভারি যানবাহন চলাচলের সময় আশপাশের ভবনে যে পরিমাণ ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়, তাতে তারা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। লকডাউনের সময় যদি বিআরটিএ তাদের কাজ অব্যাহত রাখতো এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহাসড়কে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনস করতা তাহলে হয়তো এখন মানুষকে এতটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। মূলত অপরিকল্পিতভাবে কাজ করার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যানবাহনে আসা ঢাকামুখী মানুষগুলো টঙ্গীতে চরম যানজটের কবলে পড়ছে। বুধবার সকাল থেকে সারাদিন টঙ্গীর চেরাগ আলী থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত যানবাহন ধীরগতিতে চলতে দেখা যায়। গাজীপুর মহানগরীর পুলিশের টঙ্গীতে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের টিআই শাহাদাৎ হোসেন জানান, রাস্তায় বিআরটিএ প্রকল্পের কাজ চলার কারণে যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। তবে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, বুধবার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যানবাহনের কোনো বাড়তি চাপ নেই। যাত্রীর সংখ্যাও অনেকটা কম। তবে সড়কের বিভিন্নস্থানে যাত্রীদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে। তবে দুপুরের দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহনের কিছুটা চাপ লক্ষ্য করা গেলেও ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের চেষ্টায় দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠে। কিন্তু রাজধানী ঢাকার প্রবেশ মুখ গাবতলি প্রবেশের সময় আমিন বাজারে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচন্ড গরমে বাসের ভেতরে শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা যাত্রীদের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম বলেন, যানজট নিরসনে আমরা সব সময়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে থাকি। লকডাউন শিথিলের পর প্রথমদিন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সারাদিন কোনো যানজট ছিল না। তবে পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কটিতে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। তাছাড়া মহাসড়কে যানবাহনের কোনো চাপ নেই। ফলে অনেকটা স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল করছে।
লঞ্চ চলাচল শুরু : দীর্ঘ ১৯ দিন বন্ধ থাকার পর লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে সদরঘাট থেকে। গতকাল বুধবার ভোর ৬টায় সদরঘাট থেকে এমভি ইমাম-হাসান লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর এমভি সোনারতরী, গ্রিন লাইন সদরঘাট ত্যাগ করে। চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা সোনারতরী-২ ও রফরফ-৭ লঞ্চে যাত্রীর চাপ ছিল বলে জানান বিআইডবিøউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক মোহাম্মদ নেওয়াজ। তিনি বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ১৯টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এই সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের মতোই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীরা যাতায়াত করছে কি-না সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। সদরঘাট থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, বরিশাল ও মুলাদী রুটের লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যায় বরিশালসহ আন্যান্য দূরের পথের লঞ্চগুলো ছাড়ার কথা রয়েছে।
ভরা যাত্রী নিয়ে ট্রেন : গতকাল সকাল থেকে সারা দেশে ফের ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বলাকা এক্সপ্রেস, তুরাগ এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, পারাবত এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতী সকাল থেকে ছেড়ে গেছে। রেলওয়ের দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার সকাল থেকে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২০ জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল করছে। তবে ঢাকা থেকে একতা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস এবং টঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোবরা থেকে বুধবার ছাড়ছে না।
বিমান চলাচল স্বাভাবিক : লকডাউন উঠে যাওয়ার পর প্রথমদিন দেশের ভেতরে আকাশপথে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই বলে জানিয়েছে, দেশের দুই বেসরকারি এয়ারলাইন্স। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট চালুর পর থেকে যাত্রীরা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তবে আজকে যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই। আগের মতোই তারা চলাচল করছে। নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের ব্যবস্থাপক মাহফুজুল আলম অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের বাড়তি চাপ না থাকার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা আশা করছি, সামনে যে টানা তিন দিন ছুটি রয়েছে, তারপর হয়তো চাপ বাড়বে।
চট্টগ্রামে যানজটে বেহাল দশা: চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, তীব্র যানজটে বেহাল চট্টগ্রাম নগরী। গতকাল বুধবার মহানগরীর প্রতিটি সড়কে ছিল অসহনীয় জট। বড় বড় সড়ক থেকে জট এবং যানবাহনের জটলা অলিগলি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউন শেষে সবকিছু সচল হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে নগরীতে যানবাহনের চাপ বাড়ে। প্রধান প্রধান সড়কে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়িতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে বেশিরভাগ সড়ক এখন ভাঙাচোরা। তার উপর যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ট্রাফিক ব্যবস্থাকে নাজুক করে তোলে। সড়কে নেমে কর্মজীবী মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিঘিœ হয় আমদানি-রফতানি পণ্য ও মালামাল পরিবহন। চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আশপাশের সবকটি সড়কে ছিল তীব্র জট। আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের সাথে যোগ হয় গণপরিবহন। এতে সড়কে যানজট বেড়ে যায়।
এর প্রভাবে নগরীর অন্যান্য এলাকায়ও যানজট হয়। প্রধান সড়কের কাটগড় থেকে শুরু করে ইপিজেড, কাস্টম হাউস মোড়, ফকিরহাট, আগ্রাবাদ হয়ে তীব্র জট জিইসি, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এর প্রভাবে নগরীর অন্যান্য সড়কগুলোতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকে। নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং থেকে আগ্রাবাদ চৌমুহনী অংশে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। বর্ষায় খোঁড়াখুঁড়িতে সড়কের ওই অংশ যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্তে আটকে যাচ্ছে যানবাহনের চাকা। এতে যান চলাচল মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। রাতে-দিনে সড়কে জটলা লেগেই আছে। নগরীর এ কে খান গেইট, অক্সিজেন, কালুরঘাট ও কর্ণফুলী সেতু এলাকাসহ সবকটি প্রবেশপথে যানবাহনের জটলা ছিল দিনভর। লকডাউন শেষে সব ধরনের গণপরিবহন রাস্তায় নেমেছে। ছাড়ছে দূরপাল্লার বাসও।