গণটিকায় টোকেন কেন?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশব্যাপী গণটিকা কার্যক্রম চলাকালীন রাজধানীর টিকা কেন্দ্রগুলোতে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গতকাল ছিল এই কার্যক্রমের দ্বিতীয়দিন। সরজমিন দেখা গেছে, টিকাকেন্দ্রগুলোতে প্রচণ্ড ভিড়। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বিশৃঙ্খলা আর স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অহরহ মিলছে কেন্দ্রগুলোতে। আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যেন নতুন কিছু না। কেন্দ্রগুলোতে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তারা জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহের পর দিচ্ছেন টোকেন।
এই টোকেনের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হচ্ছে টিকা। প্রশ্ন উঠেছে, গণটিকা কার্যক্রমে টোকেন লাগবে কেন? গতকাল রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর পার্কে স্থাপিত কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করে সকাল ৮টা ৪৫ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি মাহমুদা নাসরিনসহ বহু মানুষ। সারাদিন রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও জুটেনি কোভিড-১৯ এর টিকা। শেষে তাদের টিকার জন্য সোমবার যেতে বলা হয়। ওদিকে টিকা নিতে সারাদিন অপেক্ষা করে টিকা না জুটলেও অনেকেই লাইন ছাড়া পেয়েছেন টিকা। এই কেন্দ্রের একটি ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে পৌঁছায়। যাতে দেখা যায়, লাইনে না দাঁড়িয়েই টিকা পেয়ে যান এক ব্যক্তি। লাইনে দাঁড়ানোরা তাকে ধরে ফেললে স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এমনকি তার হাতে ছিল ভুয়া পরিচয়পত্র। পরিচয়পত্রে দেয়া নিজের মায়ের নাম বলতে পারছিলেন না তিনি। লাইনে দাঁড়ানো বিক্ষুব্ধ মহিলারা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনলে পাল্টা যুক্তি দেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তারা বলেন, ওনাকে আমরা বের করে দিয়ে, আইডি কার্ড নিয়ে আসতে বলেছি। কিন্তু ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে টিকা নিলেন কীভাবে? স্বেচ্ছাসেবীরা উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। মাহমুদা নাসরিন বলেন, ৯টা থেকে টিকা প্রদান শুরু হওয়ার কথা আমি ৮টা ৪৫ থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার সঙ্গে আরও ২০ থেকে ৩০ জন মহিলা ছিলেন। সারাদিন আমরা দাঁড়িয়ে থেকে টিকা পেলাম না। কিন্তু অনেকেই সিরিয়াল ছাড়া ঢুকে টিকা নিয়ে আসে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কিন্তু অন্য গেট দিয়ে লোক ঢুকছে আর টিকা নিচ্ছে। আমরা একজনকে হাতেনাতে ধরি কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীরা তা নিয়ে যথাযথ জবাব দিতে পারেন না। দিনভর দাঁড়িয়ে থাকার পর আমাদের জানিয়ে দেয়া হয় আজকের মতো টিকা প্রদান শেষ। আমাদের সিরিয়াল অনুযায়ী টোকেন দেয়া হয়। যা নিয়ে আবার পরদিন যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেও কেন টিকা পেলাম না? লাইনে না দাঁড়িয়ে, সিরিয়াল ব্রেক করে তারা কীভাবে টিকা পেলেন? আমি শনিবারেও দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রথমদিন টোকেনও পাইনি। ভিন্ন চিত্র দেখা যায় রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরে জান্নাত একাডেমি হাইস্কুল কেন্দ্রে। সেখানে ৩০০ ডোজ টিকা আনা হয়েছিলো। আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় টিকা। ফলে একাধিক ব্যক্তিকে ফিরে যেতে হয়। কেন্দ্রটিতে যারা বেলা ১১টা পর্যন্ত আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে পেরেছেন তারাই শুধু টিকা নিতে পেরেছেন। টিকা নিতে আসা লোকরা অভিযোগ করেন, তারা সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা নিতে পারেননি। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীরা সরকারদলীয় লোকদের সিরিয়াল ছাড়াই টিকার ব্যবস্থা করে দেন। মানুষ টিকা নিতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যান। রাজধানীর মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সেখানেও সকাল ৭টা থেকে দাঁড়িয়েও টিকা না পেয়ে চলে যান মানুষরা। আবার মিরপুর পল্লবীর ২ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে টিকাকেন্দ্রে টিকা নেয়ার জন্য বাইরে কয়েকশ’ লোকের সিরিয়াল দেখা যায়। সেখানে ফজরের নামাজের পর থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা পাননি বলে অভিযোগ করে টিকা গ্রহণে ইচ্ছুকরা।
মাতুয়াইলে টিকাকেন্দ্রে একই চিত্র দেখা যায়। সকাল ৭টা থেকেই লাইনে দাঁড়ান লোকজন। তাদের টিকার কার্ড নিতে হয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে। এই কেন্দ্রে আলী রহমান বলেন, নিয়ম হচ্ছে আইডি কার্ড থাকলে টিকা মিলবে। কিন্তু কার্ড দিচ্ছে কাউন্সিলর। তিনি কেন কার্ড দেবেন। আবার তার সঙ্গে যার যোগাযোগ ভালো নয় তিনি কার্ড পাবেন না। এ কেমন নিয়ম। এই টিকাকেন্দ্রের সুপারভাইজার আল-আমিন আরিফ বলেন, আমরা এখানে প্রতিদিন ২৫০টি টিকা দিয়ে থাকি। মোট ছয়দিন এই কার্যক্রম চলবে। যারা কার্ড নিয়ে আসবেন তাদের মধ্য থেকে আড়াইশ’জনকে আমরা টিকা দেবো। টিকা কার্ড আমরা কাউন্সিলরকে দিয়ে দিই, তিনিই সেগুলো বিতরণ করেন। কিন্তু এই টোকেন দেয়া কতটুকু যৌক্তিক? এটা কি সরকারি নির্দেশনার খেলাপ কিনা? এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, এই মুহূর্তে এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।