জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফুল, লোকসানের শঙ্কায় চৌগাছার চাষিরা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার ফুলচাষিরা মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে চরম সমস্যায় পড়েছেন। চলাচলে এবং পরিবহনে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় সময়মত ফুল বিক্রি করতে না পেরে ফুল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে সেই চিন্তায় বিভোর চাষিরা। এ উপজেলার অনেকেই ফুল চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। প্রায় ২/৩ বছর ধরে চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে আসছেন বলে জানা গেছে। তুলনামূলক খরচ কম এবং আয় বেশি এ কারণে বেশ কিছু এলাকার চাষিরা ফুলচাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। তবে দেড় বছর ধরে মহামারি করোনার নীল থাবায় চাষিরা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। ফুলে ফুলে ভরে আছে প্রতিটি গাছ, ফুলের আকার ও রং বেশ মনোমুগ্ধকর তারপরও বিক্রি নেই। অনেক ফুল ফুটে জমিতেই নষ্ট হতে বসেছে। কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে কৃষক তা নিজেরাও জানে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার হাকিমপুর, নারায়ণপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার জিওয়লগাড়ী বেলেমাঠ গ্রাম এলাকার বেশ কিছু চাষি বাণিজ্যিক ভাবে গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। বিগত বছরগুলোতে ফুল বিক্রি করে তারা আর্থিক ভাবে বেশ লাভবানও হয়েছেন। কিন্তু গত এক বছর ধরে ফুল বিক্রি প্রায় বন্ধ, তাই হতাশা বেড়েছে চাষিদের মাঝে।
সরেজমিন উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের পেটভরা মাঠে দেখা যায়, ফুল চাষিরা ক্ষেতে কাজ করছেন। কথা হয় অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের সাথে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ কাঠা জমিতে ভারতীয় জাতের গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন তিনি। কঠোর লকডাউনের আগে পর্যন্ত তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করছেন। এরপর হতে আর ফুল বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। প্রতিটি গাছে ফুলের সমারোহ কিন্তু ক্রেতা নেই তাই বিক্রিও বন্ধ। বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে তিনি প্রায় ২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতেন বলে জানান।
অহিদুল ইসলামের মতো ওই মাঠে চাষি শাওন হোসেন ২২ শতক, কামাল হোসেন ১৭ শতক, মাহাবুর রহমান ১ বিঘা, জয়নাল হোসেন ১ বিঘা, গোলাম মোস্তফা ১২ শতক, টিপু সুলতান ১০ শতক, জোবায়ের হোসেন ১০ শতক, হাবিবুর রহমান ১৫ শতক জমিতে ভারতীয় জাতের গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। কিন্তু ফুল বিক্রি না হওয়ায় তারা মহাদুশ্চিন্তায় আছেন।
চাষিরা জানান, এ অঞ্চলের মাটি ফুল চাষের জন্য উপযোগী। প্রথম দিকে অল্প করে চাষ করা হলেও তা এখন প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলোতে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে এ ছাড়া বাৎসরিক উৎসবেও ফুলের কদর বাড়ে। তাই বছরের পুরো সময় ফুলের দাম ভাল পাওয়া যায়। চারা রোপণের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর হতেই ফুল দেয়া শুরু করে, আর ৫ থেকে ৬ মাস একাধারে ফুল তোলা যায়। পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার বেলেডাঙ্গা বাজারে তারা পাইকারি ফুল বিক্রি করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ ঢাকা থেকেও এখানে ব্যবসায়ীরা এসে ফুল কিনে নিয়ে যেতেন। করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা আসছে না,তাই ফুল বিক্রি বন্ধ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস জানান, চৌগাছার বেশ কিছু এলাকার চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু করেছেন। কৃষি অফিসের ফিল্ড অফিসাররা চাষিদের ফুল উৎপাদনে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।