দুর্নীতি রোধে প্রয়োজন শাস্তি

0

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাধারণ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, বিভাগ, প্রকল্প প্রভৃতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি অতিস্বাভাবিক ও সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ঘুষ, কমিশন ও বখরা ছাড়া কোথাও কিছু হয় না। পুলিশের নিম্নতম পদাধিকারী কিংবা সরকারি অফিসের পিয়ন-ড্রাইভারদেরও কারো কারো যখন ঢাকা শহরে একাধিক জায়গাজমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাট হয়, তখন উপরস্থদের কী হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। অবশ্য, পুলিশ বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যকই দুর্নীতিগ্রস্ত। এই স্বল্প সংখ্যক দুর্নীতিপ্রবণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেপরোয়া দাপটে সেবাপ্রত্যাশী মানুষ অতিষ্ঠ। দুর্নীতিবাজরা প্রভাবশালী এবং সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে পরিচয়দানকারী। ফলে, তাদের অপকর্মের বিরোধিতা বা প্রতিবাদ করতে অন্যরা সাহস পায় না। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এ দেশে ঘুষছাড়া কিছু হয় না’, এ ধরনের কথা বহুবারই বলেছেন। থানা-পুলিশের ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থানায় টাকা ছাড়া কেউ কথা বলে না। কোনো সরকারি কাজ, তা কেনাকাটাই হোক, কিংবা হোক নির্মাণ ও সংস্কার, ঘুষ ও বখরা ছাড়া হয়, এমন কথা আর এখন কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। দেশি-বিদেশি বড় বড় প্রকল্পে, বড় বড় লেনদেনে অনেক মোটা অংকের কারবার হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যায় ও অনৈতিকভাবে অর্জিত অর্থ সমাজকে শুধু বিষমই করছে না, অন্য ধরনের অপরাধ-অপকর্ম সংঘটনেও ভূমিকা রাখছে। অবৈধ উপার্জনের একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে চলে যাচ্ছে। যেখানে পাচারকারীরা বাড়িঘর, জায়গাজমি, দোকানপাট ইত্যাদি কিনছে বা বিনিয়োগ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েক লাখ কোটি টাকা এভাবে পাচার হয়ে গেছে। অভিযোগ আছে, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া আছে ব্যবসায়ী, সরকার দলীয় রাজনীতিবিদ ও অন্যরা। বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে অনেক কথা, অনেক আলোচনা হয়েছে। তাতে টাকা পাচার বন্ধ হয়নি। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কারা অর্থ পাচার করেছে তাদের নামের তালিকা পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার নথিতথ্যে যাদের নাম উল্লেখিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো টু-শব্দ শোনা যায়নি। এ অবস্থাকে দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া আর কী বলা যায়!
একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অকর্মন্যতার কথাও প্রায়ই সংবাদপত্রে ও টিভিতে আসে। তাদের মধ্যে দুর্নীতিপ্রবণতাও অধিক। এদিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করবো, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধি দ্রুত বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। যারা সম্পদের হিসাব দিতে ব্যর্থ হবে কিংবা যাদের বৈধ আয়ের চেয়ে সম্পদ-সম্পত্তি বেশি হবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি বা কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এই মহামারী থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা যাবে বলে আমরা মনে করি।