টিকাদান দ্রুততর করুন

0

দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ছিল ৩২.৫৫ শতাংশ। একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৯৬। রাজধানীর হাসপাতালগুলো নির্ধারিত শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করলেও অনেক রোগী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। জেলা, উপজেলায় আধুনিক চিকিৎসার সুযোগও কম। করোনা রোগীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি আইসিইউসেবা। অথচ, তা অনেক হাসপাতালেই নেই। নেই অতি জরুরি ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ আরো অনেক আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। আবার গ্রামাঞ্চলের অনেক রোগীর পক্ষে চিকিৎসা নিতে ঢাকায় বা বড় হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ বা সামর্থ্যও কম। লকডাউনে বাধা ও দূরত্বের কারণেও ঢাকায় নেয়ার পথে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাপ্রবাসী পাঁচজন চিকিৎসক ২৫০টি উন্নত মানের ভেন্টিলেটর দেশে পাঠিয়েছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। শনিবার রাত ৮টার দিকে ভেন্টিলেটরগুলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। ডা. আব্দুল্লাহ জানান, সহজে বহনযোগ্য এসব ভেন্টিলেটর দেশের যেকোনো প্রান্তে, যেকোনো হাসপাতালে স্থাপন করা যাবে এবং দেশে করোনা চিকিৎসায় এগুলো অনেক বড় অবদান রাখবে। জানা যায়, উপহার হিসেবে পাওয়া এসব ভেন্টিলেটরের প্রতিটির বাজারমূল্য ১৫ থেকে ১৬ হাজার ডলার।
একই দিনে আরো ভারত থেকে ২০০ টন তরল মেডিক্যাল অক্সিজেন নিয়ে ভারতীয় রেলওয়ের ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ দেশে এসে পৌঁছেছে। গত ২৪ এপ্রিল ভারত এই বিশেষ ট্রেন সেবা চালু করে। তারপর বাংলাদেশই প্রথম দেশ, যেখানে অক্সিজেন এক্সপ্রেসের মাধ্যমে তরল অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই সেবা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যাবে।
অপরদিকে, হলো, শনিবারই জাপান সরকারের উপহার হিসেবে দুই লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। জানা গেছে, ইতোপূর্বে অনেকেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। টিকার অভাবে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সময় হলেও টিকা দেওয়া যাচ্ছিল না। এখন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু করা যাবে। জাপানের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, এক মাসের মধ্যে আরো অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে। শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এ বছর ও আগামী বছরের প্রথম দিকেই আরো মোট ২১ কোটি ডোজ টিকা দেশে চলে আসবে। তাতে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ককে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা যাবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন, তাদের ৮০ শতাংশই টিকা নেননি। টিকা না নেওয়াদের মধ্যে মৃত্যুর হারও অনেক বেশি। এসব কারণে বিশেষজ্ঞরা দ্রুত সম্ভাব্য সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা আশা করি, টিকাদান কর্মসূচি আরো ব্যাপক করা হবে এবং সর্বস্তরের মানুষের টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।