বাবার জন্য অক্সিজেন নেয়ার পথে আটক সাতক্ষীরায় সেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেল কমিটি

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার আনার পথে ছেলেকে আটকে রাখা সাতক্ষীরার ইটাগাছা পুলিশ ক্যাম্পের সেই আলোচিত এএসআই সুভাষ চন্দ্র সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তদন্ত প্রতিবেদনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা ওলিউল ইসলাম তার অসুস্থ বাবা রজব আলী মোড়লের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার পথে এএসআই সুভাষ চন্দ্র সেন তাকে দুই ঘন্টা আটক এবং পরে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন বলে অভিযোগ করা হয়। তবে তদন্তে তাকে আধাঘন্টা আটকে রাখার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু ২শ’ টাকা নেওয়ার সত্যতা মেলেনি। তদন্ত শেষে গত ১১ জুলাই প্রতিবেদন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, ওই ঘটনার পর এএসআই সুভাষ চন্দ্র সেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হতে পারে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত এএসআই সুভাষ চন্দ্র সেনের বাড়ি মাগুরার শালিখায়। দুই মাস আগে তিনি ইটাগাছা ক্যাম্পে যোগদান করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ওই তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. ইকবাল হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) সাইফুল ইসলাম ও ইটাগাছা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইনসপেক্টর ফয়সাল তারেক ইবনে আজিজ।
করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ রজব আলী মোড়ল। কিন্তু শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় সিলিন্ডারের সাহায্যে তাকে বাড়িতে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিলো। শহরের পলাশপোল এলাকার ব্যবসায়ী ও জেলা পরিষদ সদস্য ফেরদৌস আলফা তার চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে সেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ইটাগাছা মোড়ে এএসআই সুভাষ চন্দ্র সেন তাকে আটক করেছিলেন বলে ওলিউল ইসলামের অভিযোগ। লকডাউনে বাইরে বের হওয়ার কারণে এ সময় তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তাকে সেখানে দুই ঘন্টা আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২শ’ টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন এএসআই সুভাষ চন্দ্র সেন। এরপর বাড়ি ফিরে ওলিউল ইসলাম দেখতে পান, তার বাবা মারা গেছেন। অমানবিক এই ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে অভিযুক্ত এএসআই সুভাষ চন্দ্র সেনকে প্রথমে ক্লোজ করে কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাটি তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তে কমিটির সদস্যরা অভিযোগের সত্যতাও পান।