কর্ম হারানোর ঝুঁকিতে দুই কোটি মানুষ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সিপিডিসহ দেশের বিভিন্ন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে দেড় থেকে ২ কোটি মানুষ কর্ম হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডি বিশেষ ফেলো এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, যুবদের সংখ্যা পরিমাণে বাড়লেও গুণগত মান বাড়েনি। তাই আগামী বাজেটে যুব ভাতা চালুর দাবি জানান তিনি। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ-এর আয়োজনে এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় ‘এসডিজি বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা: স্থানীয় প্রেক্ষিত ও যুব সমাজ’ শীর্ষক একটি ভার্চ্যুয়াল সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব মো. আজহারুল ইসলাম খান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম অংশ নেন। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সিপিডি’র সংলাপ এবং প্রচার যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে এক তৃতীয়াংশ যুবক (১৫ থেকে ২৯ বছর ধরে) ধরা হয়। অর্থাৎ ৫ থেকে ৬ কোটি যুবক। এরা সবাই শিক্ষিত যুবক। এরাই বেশি বেকার হয়েছে। ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, যদি প্রতি চারজনে একজন বেকার হয়। তাহলে শিক্ষিত যুবকের মধ্যে দেশে প্রতি ৩ জনে একজন বেকার। অর্থাৎ বাংলাদেশ এক অদ্ভুত দেশ। এখানে লেখাপড়া করে যে তত বেশি বেকার থাকে সে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগসহ (সিপিডি) দেশের বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ আবার নতুন করে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে ঢুকে গেছে। যাদের আয় ২ ডলারের নিচে। আর অন্যান্য হিসাব দেখলে দেড় থেকে ২ কোটি মানুষ কর্ম হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছে। সরকারের হিসাব মতে, বছরে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তাহলে এই দুইয়ের মাঝে অনুমান করা যায় দেশে বেকার সংখ্যা কত? এক তৃতীয়াংশের বেশি বা কম হতে পারে। তিনি বলেন, করোনায় বেকার যুবকদের সংখ্যা আরো বেড়েছে। তাই আগামী বাজেটে যুব ভাতা চালুর আহ্বান জানান দেবপ্রিয়। তাদেরকে ভাতার আওতায় আনা ও নিবন্ধনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি। প্রয়োজনে অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, প্রথাগত দক্ষতার কথা অনেক শুনেছি। এখন দরকার চাহিদাসম্পন্ন দক্ষ যুব সমাজ।
সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করে নাগরিক প্ল্যাটফরমের গবেষক নাজীবা আলতাফ। তিনি বলেন, শুধু কর্মভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ না করে, সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যুবভিত্তিক প্রশিক্ষণ, আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং যুবদের অধিকার সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও উদ্যোগ নেয়া উচিত। শুধুমাত্র পরোক্ষভাবে পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়া নয়, যুবদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি জবাবদিহি প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট এসডিজি সম্পর্কিত এবং যুবভিত্তিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা উচিত। সংলাপে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব মো. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে, ই-লার্নিং প্ল্যাটফরম এসডিজি’র জবাবদিহিতা এবং যুবকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম যুব প্রশিক্ষণগুলোর যথাযথ প্রতিবেদন এবং প্রভাব বিশ্লেষণের অভাব রয়েছে, তাই অ্যাকশনএইড এবং নাগরিকের প্ল্যাটফরমের মতো অন্যান্য সংস্থাকে সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। এসডিজি বাস্তবায়নে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রধান লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি বলেন, ২০১৭ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশ ভিএনআর-এ এসডিজি বাস্তবায়নের প্রগতি তুলে ধরলেও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও যুব সমাজকে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই অতিমারির কারণে পিছিয়ে পড়া যুবদের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা দরকার।