শালিখায় হরিশপুরে চিত্রা নদীর ওপরে স্থানীয়দের অর্থায়নে ব্রিজ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিল কর্তৃপক্ষ

0

শহিদুজ্জামান চাঁদ,আড়পাড়া (মাগুরা) ॥ মাগুরার শালিখা উপজেলায় হরিশপুর ঘাটে চিত্রা নদীর ওপর বাঁেশর সাঁকোই ছিল দু পারের বাসিন্দাদের পারাপারের একমাত্র ভরসা। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াই স্থানীয়রা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৩৫ ফুট লম্বা ও ৮ ফুট চওড়া স্থায়ী একটি ছোট ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। পরিকল্পনা মাফিক উভয় পাড়ে মাটি তুলে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। মাটি ভরাটের কাজ শেষের পথে যেতেই বন্ধ হয়ে গেল সকল কাজ। বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নদীর এরিয়াই মাটি ভরাট করে কোনো কিছু করা যাবে না নির্দেশ দেওয়াই ভেস্তে যায় সব পরিকল্পনা।
উপজেলার হরিশপুর ঘাটে ব্রিজ না থাকায় তাদের একমাত্র ভরসা ছিল নিজেদের তৈরি বাঁশের সাঁকো। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছিল ১০ গ্রামের মানুষ। বিশালাকৃতির ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হওয়ার সময় ভয়ে থাকতো সবাই। পা পিছলে পড়ে অনেক সময় ঘটে দুর্ঘটনা। একটি ব্রিজের অভাবে এমন দুর্দশা এখানকার বাসিন্দাদের। ব্রিজ নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়েছে। তবে মেলেনি ব্রিজ, মিলেছে শুধুই আশ্বাস। এমনকী সাঁকো নির্মাণে সরকারি কোনো অনুদানও মেলেনি। প্রতিবছর দু পারের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো সংস্কার করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ-খুঁটি। এটি তত্ত্বাবধান করে খানপুর বাজার কমিটি।
এই দুর্ভোগ লাঘবে এলাকার তরুণ সমাজ এগিয়ে এসেছিল । তারা নিজেদের উদ্যোগে চিত্রা নদীর ওপর পারাপারের জন্য স্থায়ী ছোট ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম খান,খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম হোসেন,বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক হারুন খান স্থানীয়ভাবে কিছু টাকা সংগ্রহ করে নদীর দুই পাশে মাটি ভরাট করে ব্রিজ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি এনেছিলেন। বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস জানান,সপ্তাহে দু দিন শুক্র ও সোমবার খানপুরে হাট বসে। নদীর উত্তর পাশের শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আসেন এ হাটে । এছাড়া কয়েক শ শিক্ষার্থী পার হয়ে থাকে এ সাঁকো দিয়ে। বাজার কমিটির সেক্রেটারি হারুন অর রশিদ বলেন সাপ্তাহিক হাট বাদেও প্রতিদিন বৈকালীন বাজার বসে। বাজার ছাড়াও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সহস্রাধিক লোকের আনাগোনা চলে এ বাজারে। বাজারের দক্ষিণপাশে রয়েছে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-প্রাইমারি,হাইস্কুল ও দাখিল মাদ্রাসা। এ সমস্যা সমাধানের জন্যই সকলে নিজেদের অর্থায়নে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
খানপুর চিত্রা নদী পার হলেই উত্তরে মাগুরার শালিখা উপজেলার সীমাখালি, কাতলী, ছয়ঘরিয়া হরিশপুর, খোলাবাড়ি, আড়ুয়াকান্দি ও পাঁচকাউনিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের অসংখ্য মানুষকে প্রতিদিন পারাপার হতে হয় এ সাঁকো দিয়ে। এর মধ্যে বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পারপার হয় এ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে। এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই সাঁকো থেকে ছিটকে পড়ে আহত হয়েছেন একাধিকবার। উদ্যোক্তা খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম খান বলেন, ছেলে-মেয়েদের কষ্ট লাঘবে আমরা অনেকদিন ধরে দাবি করে আসছি খানপুর চিত্রা নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমরা স্ব-উদ্যোগে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলাম।
ব্রিজ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সেলিম হোসেন জানান, খানপুর চিত্রা নদীর ওপর ১৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এই ব্রিজ নির্মাণে আমরা আনুমানিক ১০ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করে কাজ শুরু করে ব্যর্থ হয়ে গেলাম। আশা ছিল সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যেই আমরা আমাদের কষ্ট লাঘবে নিজেরা এই কাজ শেষ করতে পারবো। কিন্তু সকল পরিকল্পনার কাজ ভেস্তে গিয়ে আমাদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।