অভয়নগরে আইনজীবী অপহরণ ঘটনায় দু মাসেও আটক হয়নি প্রতারক রাজ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের অভয়নগরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলনকে আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হাবিব মিলন ওরফে রাজকে গত দু মাসেও আটক করতে পারেনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। অভয়নগরের একতারপুর থেকে ভুক্তভোগী আইনজীবীকে উদ্ধারের পর আত্মগোপন করে রয়েছেন অত্যন্ত ধূর্ত ওই প্রতারক। তবে তদন্ত সংস্থা পিবিআই বলছে, তারা প্রতারক রাজকে আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পিবিআইয়ের দেয়া তথ্য ও আটক প্রতারকচক্রের সদস্যদের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বারুইহাটি গ্রামের বাসিন্দা এম এ হাকিমের ছেলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলনের সাথে আশাশুনি উপজেলার প্রতাবনগর গ্রামের মাদ্রসাশিক্ষক এস এম হারুন অর রশিদের মেয়ে রাবেয়া সুলতানা রিতুর পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। কিন্তু আইনজীবীর পরিবারের লোকজন জানতেন না মেয়েটি মাদকাসক্ত, প্রতারকচক্রের সদস্য। অর্থবিত্ত লোকজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে রাবেয়া সুলতানা রিতু ও তার বান্ধবী সুরাইয়া সুলতানাসহ একটি চক্র টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে থাকে। তাছাড়া রাবেয়া সুলতানা রিতু বাগদত্ত আইনজীবীকে বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। যা তার আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানা গেছে। এ কারণে বান্ধবীর সহায়তায় বাগদত্ত আইনজীবীর কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে তাকেই টার্গেটে পরিণত করেন। গত ২৭ জানুয়ারি অভয়নগর উপজেলার একতারপুরে বান্ধবী সুরাইয়ার ভাড়া বাড়িতে বসে তিনিসহ চক্রের সদস্যরা এর পরিকল্পনা করেন। রাবেয়া সুলতানা রিতু, সুরাইয়া ও তার স্বামী হাবিব মিলন ওরফে রাজসহ আরও কয়েকজন এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেখানে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলন বাড়ি থেকে বের হন বাগদত্তা রাবেয়া সুলতানা রিতুর সাথে দেখা করার জন্য। মূলত রাবেয়া সুলতানা রিতু পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তাকে দেখা করতে বলেছিলেন। খুলনার পাওনিয়ার কলেজের সামনে দেখা করার পর তারা দুজনে জাহানাবাদ ক্যান্টমমেন্ট পার্কে ঘুরতে যান। এরপর রাবেয়া সুলতানা রিতু কৌশলে আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলনকে বান্ধবী সুরাইয়ার অভয়নগরের একতারপুরের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সুরাইয়া ও তার স্বামী হাবিব মিলন ওরফে রাজসহ চক্রের সদস্যরা কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই আইনজীবীর হাত-পা বেঁধে ফেলেন। তাকে হত্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে টাকা-পয়সা দাবি করা হয়। সন্ধ্যায় ওই আইনজীবী তার এক বন্ধু হাফিজকে বিপদে আছেন এ কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা এনে দেন। রাত আটটার দিকে হাবিব মিলন ওরফে রাজ ও রাবেয়া সুলতানা রিতু বাসা থেকে বের হয়ে খুলনার ফুলতলায় যান। সেখানে বিকাশের এক এজেন্টের দোকান থেকে ওই ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করে হাবিব মিলন ওরফে রাজ। এই টাকা থেকে দুই হাজার টাকা রাবেয়া সুলতানা রিতুকে দিয়েছিলেন রাজ। তবে প্রতারকচক্রের সদস্যরা মোবাইল ফোনে আইনজীবীর পিতা এম এ হাকিমের কাছে প্রথমে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন। তাকে বলা হয়েছিলো, সন্তানকে ফিরে পেতে চাইলে এই টাকা দিতে হবে। এক পর্যায়ে ৩০ লাখ টাকার দাবি থেকে থেকে সরে এসে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এরই মধ্যে পিবিআই কর্মকর্তারা এম এ হাকিমের থানায় করা জিডির প্রেক্ষিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে প্রথমে খুলনার দৌলতপুরের মাছবাজার ঘাট থেকে কৌশলে চক্রের সদস্য শাহীন শিকদারকে আটক এবং পরে তার স্বীকারোক্তিতে অভয়নগরের একতারপুরের সুরাইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলনকে উদ্ধার করেন। এ সময় সেখান থেকে সুরাইয়া এবং চক্রের সদস্য আব্দুস সালামকে আটক করা হয়। এরপর গত ১১ ফেব্রুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাজার থেকে রাবেয়া সুলতানা রিতুকে আটক করে পিবিআই। কিন্তু চক্রের অন্যতম সদস্য হাবিব মিলন ওরফে রাজকে গত আড়াই মাসেও আটক করতে পারেনি পিবিআই।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই ¯েœহাশিস দাশ জানান, মামলার তদন্ত কাজ শেষের দিকে। তারা ঘটনার সাথে জড়িত ৪ জনকে ইতোমধ্যে আটক করেছেন। চক্রের অপর সদস্য রাজকে আটকের জন্য তারা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে আটক প্রতারকচক্রের সদস্য শাহীন শিকদার, আব্দুস সালাম, সুরাইয়া সুলতানা ও রাবেয়া সুলতানা রিতু আইনজীবী অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।