শিপিং বিড়ম্বনায় হুমকিতে ভারতের চাল রফতানি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥নতুন চুক্তির চেয়ে বিদ্যমান চুক্তির চাল সরবরাহের ওপর জোর দিচ্ছেন ভারতের চাল রফতানিকারকরা। লজিস্টিকস বিড়ম্বনায় নতুন রফতানি ক্রয়াদেশ গ্রহণে বিরত থাকছেন চাল রফতানিকারকরা। যদিও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাসমতী চালের বাইরেও অন্যান্য চালের চাহিদা বেড়েছে। খবর হিন্দু বিজনেস।
ভারতের চাল রফতানিকারক সংস্থার (টিআরইএ) প্রেসিডেন্ট বিভি কৃষ্ণ রাও বলেন, চাল রফতানিকারকদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে লজিস্টিকস। এটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ক্রয়াদেশ নেয়ার চেয়ে বিদ্যমান ক্রয়াদেশের ডেলিভারিতে আমরা অনেক জোর দিচ্ছি।
দিল্লিভিত্তিক অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইআরইএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট বিজয় শেঠিয়া বলেন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে চাল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভারতের বাসমতীর বাইরে অন্যান্য চাল রফতানি দ্বিগুণ হয়েছে।
লোকসভায় এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পিয়ুশ গয়াল জানান, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-জানুয়ারিতে চাল রফতানি হয়েছে ৯৪ লাখ ৬০ হাজার টন, যেখানে আগের অর্থবছরের পুরো মেয়াদে চাল রফতানি হয়েছে ৫০ লাখ ৫০ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে চাল রফতানিতে ভারতের আয় হয়েছে ৩৫০ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার, আগের অর্থবছরে যেখানে আয় হয়েছিল ২০৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের ফসল উত্তোলন মৌসুমে (আগস্ট-জুলাই) থাইল্যান্ডের চাল উৎপাদন ১২ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় পর্যায়ে চাল কেনাকাটার পরিমাণ ২ শতাংশ বাড়তে পারে। এছাড়া শূকরের খাবার হিসেবে ভাঙা চালের চাহিদাও ২ শতাংশ বাড়বে। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ডের রফতানি শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ইউএসডিএর।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিরতা বিরাজ করলেও সেখানকার চাল রফতানিকারকরাও যথারীতি সুযোগ পাবেন। পরিবহন খাতে বিঘ্ন ঘটায় এবং ব্যাংক খাতে লেনদেন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মিয়ানমারের স্থানীয় বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এ কারণে চলতি মাসে দেশটির চাল রফতানি বেশ দুর্বল ছিল। অবশ্য জানুয়ারিতে চীনের বাইরে ফিলিপাইন ও আইভরি কোস্ট মিয়ানমার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চাল আমদানি করেছে।
এশিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের বাজারে অস্থিরতার জেরে ভালো সুযোগ এসেছে ভারতের চাল রফতানিকারকদের কাছে। এমনটাই মনে করছেন বৈদেশিক বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। তবে মিয়ানমারের জন্য ইতিবাচক হচ্ছে চীন আকাশ বা স্থলপথে মিয়ানমার থেকে বড় অংকের চাল আমদানি করবে।
টিআরইএর কৃষ্ণ রাও বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানি করছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল রফতানিকারক ভিয়েতনাম। শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও ভারতের বাজারের দিকে তাকিয়ে আছে। এতে ভারতের চালের অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু মাশুল ও কনটেইনার চার্জ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন লজিস্টিকস সমস্যার কারণে ভারতের চাল রফতানিকারকরা নতুন ক্রয়াদেশ নেয়া থেকে বিরত থাকছেন এবং পুরনো ক্রয়াদেশের ডেলিভারির ওপরই জোর দিচ্ছেন।
ভারতীয় বন্দরে আন্তর্জাতিক পণ্যবাহী জাহাজের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় টনপ্রতি শিপিং ফি ২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হয়েছে। এছাড়া আফ্রিকায় টনপ্রতি শিপিং ফি ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৯০ ডলার করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে রেকর্ড চাল উৎপাদন সত্ত্বেও অতিরিক্ত খরচ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ (জুলাই-জুন) মৌসুমে ভারতের চাল উৎপাদন হয়েছিল রেকর্ড ১১ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার টন। চলতি মৌসুমে তা ১২ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার টনের নতুন রেকর্ড গড়তে পারে।