৩০ মিনিটেই তছনছ নোয়াগাঁও : চলে লুটপাঠ, মন্দির এবং প্রতিমাও হামলার শিকার হয়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ৩০ মিনিটেই দুষ্কৃতকারীরা তছনছ করে দেয় হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামের পূর্ব পাড়া। আধা ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় প্রায় ৮৮টি বাড়িঘরে। বসতবাড়ির লাগোয়া ব্যক্তিগত প্রার্থনাস্থলে থাকা প্রতিমাও হামলার শিকার হয়। সবকিছু হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠলেও মানসিক ক্ষতি কাটানো অনেক কষ্টের। পার্শ্ববর্তী গ্রামের পরিচিত অনেকেই এই হামলায় জড়িত ছিল। যা মন থেকে মেনে নিতে পারছি না। একটি ফেসবুক পোস্টকে নিয়ে উত্তেজনার সূত্রপাত হলেও হামলায় ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর অভিযোগ উঠেছে নাচনী গ্রামের বাসিন্দা সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ও যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম স্বাধীন মিয়ার বিরুদ্ধে।
ঘটনার পর রোববার দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তিনি জানান, ১৬ই মার্চ নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাশ আপন নিজ ফেসবুকে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করে। ফেসবুক পোস্টটি ভাইরাল হলে মামুনুল হকের পছন্দের লোকজন উত্তেজিত হয়ে মিছিল করে। তাৎক্ষণিকভাবে শাল্লা থানা পুলিশ প্রশাসনের লোকজন ও উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরীকে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। ফেসবুকে পোস্টদাতা ঝুমন দাশকে আটক করায় উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়। একাধিক সূত্রে জানা যায়, এরপর ফেসবুক পোস্টকে কাজে লাগিয়ে গ্রামবাসীকে সংগঠিত করে স্বাধীন মেম্বার ও তার লোকজন। জলমহাল নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর সঙ্গে পূর্ব বিরোধ ছিল স্বাধীন মেম্বারের। ওই পূর্ব বিরোধের প্রতিশোধ নিতেই হামলা-লুটপাটে অগ্রণী ভূমিকা ছিল স্বাধীন মেম্বারের। ১৭ই মার্চ সকালে মসজিদ থেকে মাইকিং করে নাচনী, চণ্ডীপুর, সন্তোষপুর, ধনপুর, খাশিপুর গ্রামের লোকজনকে সংগঠিত করে স্বাধীন মেম্বারের লোকজন। মাইকিং শুনে হাজারো মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার জন্য বের হয় মানুষজন।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১৭ তারিখ লোকজন সংগঠিত হয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালাবে- এ খবর পেয়ে গ্রামের পশ্চিম দিকে অবস্থান নিয়ে লোকজনকে বাধা দেই। এ সময় কিছু দুষ্কৃতকারী কৌশলে নদী পাড়ি দিয়ে গ্রামের পূর্বদিকে প্রবেশ করে হামলা চালায়। অল্প কিছু সময়ে তছনছ করে প্রায় ৮৮টি বাড়ি। পুলিশ দ্রুত পূর্ব পাড়ায় প্রবেশ করলে পালিয়ে যায় তারা। সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় অনেক প্রশ্নের উত্তর এখন দেয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, দ্রুত অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে মূল ঘটনা প্রকাশ করবো। ইতিমধ্যে আমরা ৩৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। আসামি ধরার কাজ চলমান রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপকর্ম করতে না পারে।
এদিকে, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনায় রোববার আরো ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে দুটি মামলায় মোট ৩৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, শনিবার দিবাগত রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ পর্যন্ত এ মামলার ৩৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করায় নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।