যশোরে ৭২ ঘন্টায় তিন শিশুসহ চারজনের আত্মহত্যা

0

বিএম আসাদ ॥ যশোরে ৭২ ঘন্টার ব্যবধানে তিন শিশু ও যুবতী বধূ আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারীরা যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের আবু তাহেরের কন্যা রেহেনা আক্তার (১৫), নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের হাটবিলা গ্রামের আবু জাহিদের স্ত্রী বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের মঈনুল ইসলামের পুত্র নিয়ামুল ইসলাম (১৩), কেয়া আক্তার রিমি (১৭) অভয়নগর উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের পদ্মপুকুরপাড়ার আমজাদ বিশ্বাসের কন্যা ফাতেমা খাতুন (১৩)।
পুলিশ ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, রেহেনা আক্তার কুয়াদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। একই গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে আজিজুল ইসলামের সাথে তার প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে আজিজুল ইসলাম প্রেম প্রত্যাখ্যান করে। এ ঘটনায় রেহেনা আক্তার মোবাইল ফোনে তার প্রেমিককে “তুই আমাকে বাঁচতে দিলি না” বলে এসএমএস দেয় এবং বুধবার রাতে পড়ার ঘরে আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। মৃতুার পিতা আবু তাহের স্থানীয় মেম্বর মোঃ রাশেদ এ তথ্য জানিয়েছেন। ময়না তদন্তের জন্য নরেন্দ্রপুর ফাঁড়ির পুলিশ লাশ উদ্ধার করে গতকাল যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। একই রাতে নিজের ঘরের আড়ার সাথে নাইলনের নেট দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ফাতেমা খাতুন। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। মৃতার মাতা হাসি বেগম তার মৃত্যুকে সন্দেহজনক বলেছেন। অভয়নগর থানার এসআই মোঃ জাকির হোসেন জানিয়েছেন, তার গলায় চন্দ্রাকৃতি আত্মহত্যার দাগ রয়েছে। লাশের ময়না তদন্ত হলে প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য জানা যাবে। তবে কী কারণে সে গলায় ফাঁস দিয়েছে তার সঠিক কোন কারণ কেউ বলতে পারেননি। ২ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে কেয়া আক্তার রিমি স্বামীর গৃহে ঘাসমারা ওষুধ পান করে। পরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। তখন চিকিৎসক খুলনায় স্থানান্তর করেন। খুলনা গাজী মেডিকেল কিনিকে কেয়া আক্তার রিমিকে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে লাশ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে আনা হয়। মৃতার শ্বশুর শাহজান কবির ও পিতা শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, নরেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় কেয়া আক্তার ও আবু জাহিদ নিজেরা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ে করে। তাদের বিয়ের বয়স ৯ মাস। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করায় দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। এর এক পর্যায়ে ঘাসমারা ওষুধ পান করে কেয়া আক্তার আত্মহত্যা করেছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে, ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে নিয়ামুল ইসলাম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে পাবনার ঈশ্বরদীর দাসুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। মোবাইল ফোন কিনে না দেয়ার কারণে অভিভাবকদের প্রতি অভিমান করে নিয়ামুল ইসলাম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তার লাশ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। লাশের ময়না তদন্ত হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নূর কতুবুল আলম বলেন, অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাকে অভিভাবকদের ুব্ধ হলে চলবে না। ঘটনার সুফল-কুফল সম্পর্কে বুঝতে হবে। তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।