যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের স্টাফ কোয়ার্টারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড : ৬টি ঘর মালামালসহ ভস্মীভূত, ব্যাপক ক্ষতি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের স্টাফ কোয়ার্টারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে টিনশেডের স্টাফ কোয়ার্টারের ৬টি ঘর ভস্মীভূত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটককের ভেতরে কোয়ার্টারে আগুন লাগে। ভস্মীভূত ওই ৬টি ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন কারাগারের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার ইউনুনছ আলী, কারারক্ষী আশরাফুল আলম, আমিনুর রহমান, সুমন হোসেন, তারিকুজ্জামান রাসেল ও জিয়াউর রহমান। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে সুবেদার ইউনুছ আলী ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর কিছুক্ষণ পর আগুন আশপাশের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান জানান, আগুন লাগার পরপরই তিনি ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। কিছু সময়ের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এ সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসলে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট এসে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টা অভিযানের পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগেই ঘরগুলোর সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অভিযানে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার শহিদুল ইসলাম জানান, স্টাফ কোয়ার্টারের এই ৬ টি ঘরে কারারক্ষীরা তাদের পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। প্রতিটি ঘরই টিনের বেড়া ও ছাউনি ছিলো। যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত ঘরের বসবাসকারী জানতে পারায় তারা সহজে বের হতে পেরেছেন। যে কারণে এতে কোনো প্রাণহানি বা আহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি নিশ্চিত হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয় এখন কিছু বলা যাবে না। পরে নিশ্চিত করে বলা যাবে। ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানো সময় সেখানে রাত আটটার দিকে উপস্থিত হন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান। তিনি আগুন নেভানো কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। জেলা প্রশাসক উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আগুনে স্টাফ কোয়ার্টারের ঘরগুলো পুড়ে গেলেও কোনো হতাতহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুনের কারণ এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত করা হবে।  ক্ষতিগ্রস্ত সুবেদার ইউনুছ আলীর ছেলে সাগর কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ঘরে টিভি, ফ্রিজ যা ছিলো তা সব পুড়ে গেছে। সাগর বলেন, আমি ঘরের বাইরে ছিলাম এ সময় হঠাৎ একটি শব্দ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমরা চিৎকার করতে থাকি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের দল এখানে আসে। একটু আগে আসলে হয়তো এতো ক্ষতি হতো না। কারারক্ষী জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে এ আগুন লেগেছে। আগুনে আমাদের কিছু আর অবশিষ্ট নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। এতদিন যা করেছিলাম তা সব পুড়ে গেছে। আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ব্যারাকের ৬টি ঘরেই হিটারে রান্নার ব্যবস্থা ছিলো। এসব কারণে অগ্নিকান্ডের কারণ হতে পারে বলে তারা সন্দেহ করেন। এদিকে কারাগারের ব্যারাকে আগুন লাগায় কারাগারের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঘটনার পরপরই কোতয়ালি থানার ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হন। তারা আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেন।