ভ্যাকসিন তালিকা নিয়ে জেলা-উপজেলায় হ-য-ব-র-ল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় দেশবাসী। গত ২৭শে জানুয়ারিতে রাজধানীতে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন হলেও সারা দেশের মানুষ পাবেন ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে। ইতিমধ্যে টিকাদানের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। জেলায় জেলায় পৌঁছে গেছে ভ্যাকসিন। বলা হচ্ছে অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরাই কেবল ভ্যাকসিন পাবেন। কিন্তু জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলা থেকে একটি তালিকা করে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকায় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মচারীসহ অনেকের নাম রয়েছে। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বলছে, অনলাইনে নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক অগ্রাধিকার তালিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে যাবে।
ওই তালিকাই জেলা ও উপজেলায় চলে যাবে। সে তালিকা ধরে টিকা প্রয়োগ করা হবে। তবে কেন উপজেলা থেকে তালিকা পাঠানো হচ্ছে এ নিয়ে কারও কাছে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। বরং তৈরি হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ওদিকে গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ২০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য গঠিত উপজেলা কমিটির সভাপতি এবং মুলাদী উপজেলার নির্বাহী অফিসার শুভ্রা দাস করোনার টিকার তালিকা প্রসঙ্গে বলেন, ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের অফিসে পাঠানো হয়েছে। তালিকা করে গত বৃহস্পতিবার পাঠিয়েছি। তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যাটা বলতে পারবো না। কারা আছেন তালিকায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ সদস্য, সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। জনপ্রতিনিধি হিসেবে গ্রাম পর্যায়ের ইউপি সদস্য ও চেয়াম্যানদেরও নাম আছে তালিকায়। বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মুনিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, তালিকা তৈরি করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সংখ্যা বলতে পারবো না। নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার নির্বাহীর অফিসার মোসা. উলফৎ আরা বেগম টিকা বিতরণের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, সকল জনপ্রতিনিধি, সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। সংখ্যাটা বলতে পারবো না।
ভ্যাকসিন বিতরণের জেলা পর্যায়ের কমিটির সদস্য সচিব এবং বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। অতিরিক্ত মজুতের জন্য আরো ৪৮ হাজার ডোজ টিকা হাতে এসেছে। এগুলো জেলা প্রশাসক উপজেলা থেকে তালিকা নিয়ে সমন্বয় করে বিতরণ করবেন। তিনি আরো জানান, মৌখিকভাবে ৭০ হাজার মানুষের জন্য টিকার চাহিদা দেয়া হয়েছিল। টিকা বিতরণের জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে। কোল্ড চেইন মেন্টেইন করে টিকা রাখা হয়েছে। ৭ই ফেব্রুয়ারি তা বিতরণ করা হবে। টিকা বিতরণ ও তালিকা প্রসঙ্গে রংপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বলেন, ২ লাখ ৪ হাজার ভ্যাকসিন হাতে পেয়েছেন। করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধারা এই টিকা পাবেন। এতে স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক ও বয়স্করা থাকবেন অগ্রাধিকার তালিকায়। অ্যাপসে নিবন্ধন করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে টিকা বণ্টনের বিষয়ে ১৩ই ডিসেম্বর মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। নির্দেশনা মোতাবেক করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটিতে ১৬ জন করে সদস্যের উল্লেখ আছে। জেলা কমিটির পাঁচটি ও উপজেলা কমিটির চারটি সুনির্দিষ্ট কাজের কথা চিঠিতে উল্লেখ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রেরিত নির্দেশনায় এই কমিটির কর্মপরিধিও নির্ধারণ করা হয়। ভ্যাকসিন বিতরণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি গাইড লাইন বেঁধে দেয়া হয়। করোনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীগণ, সম্মুখ সারির কর্মীগণ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার পাবে। নির্দেশনায় কমিটিকে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ করতে বলা হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রদানকালীন সময়ে বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ আছে নির্দেশনায়।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে গঠন করা কমিটিতে সভাপতি রয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং সচিব রয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে এমন দু’টির এনজিও’র প্রতিনিধি। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আইসিটি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত দুইজন গণ্যমান্য ব্যক্তি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, করোনার টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রথমটি কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটি, এই কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরের কমিটি টিকা ব্যবস্থাপনা ওয়ার্কিং গ্রুপ। এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব। জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় কমিটির নাম কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি। এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন)। টিকাবিষয়ক জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এতে মোট সদস্য সংখ্যা ১৬ জন। ৪ঠা ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুরক্ষা অ্যাপ: গতকাল মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের জানান, করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধনের জন্য আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুরক্ষা অ্যাপ গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হবে। তিনি বলেন, আইসিটি মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে, ৪ তারিখের মধ্যে ওই অ্যাপ মোবাইলে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপ দেয়া হবে। সোমবারের মধ্যে দেশের সব জায়গায় করোনাভাইরাসের টিকা পৌঁছে যাবে বলেও সাংবাদিকদের জানান মহাপরিচালক। টিকা বিতরণের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আজকালের মধ্যে দেশের সব জায়গায় টিকা পৌঁছে দিতে পারবো। আর দেরি হবে না এটুকুই বলতে পারি। তিনি জানান, ইতিমধ্যে টিকাকেন্দ্রগুলোতে বুথ তৈরি করা হয়েছে। ভ্যাকসিনেটর ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণও শেষ পর্যায়ে। সকল জেলা-উপজেলার ফোকাল পারসনদের সঙ্গে সোমবার আমাদের একটা মিটিং আছে। তাদের কাছ থেকে আমরা একটা ফিডব্যাক নেব যে তারা কী কী সমস্যা ফিল করছেন। যে সমস্যাগুলো আমরা ঠিক করবো। যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে তাদের সহায়তা করবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে স্থানীয় আইসিটি কার্যালয়ের কর্মীদের সহায়তায় স্বাস্থ্য বিভাগ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
প্রত্যেকটা উপজেলায় ইন্টারনেট কানেকশনসহল্যাপটপসহ দেয়া আছে। আমরা একটা চিন্তা করেছি, যারা অনলাইনে আবেদন করতে পারবে না, স্থানীয় আইসিটির লোক আছে, তাদের সহায়তায় নিবন্ধন করে দেয়া হবে। টিকা দেয়ার আগে এলাকায় ঘোষণা দিয়ে দেয়া হবে যার যখন সুবিধামতো রেজিস্ট্রেশন করে যান। যদি ১০০ জনের রেজিস্ট্রেশন হয়ে যায় তাহলে পরপরই আমরা একটা ডেট দিয়ে দেবো। ওই ১০০ জন ওইদিন এসে টিকা নেবে। রেজিস্ট্রেশন হবে অনলাইনেই, আমাদের লোকজন হেল্প করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭শে জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফরমের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়। মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধন করতে না পারায় ভোগান্তিতে পারেন আগ্রহীরা। টিকা নিতে আগ্রহী সবাইকেই নিবন্ধনের কাজটি করতে হবে। সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারি সারা দেশে শুরু হবে গণটিকাদান।