১৭ মামলার আসামি এখন ‘নিরীহ যুবক’

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাটের শরণখোলায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, নারী নির্যাতনসহ ১৭ মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম (৩৫)। এলাকায় এমন কোনো অপরাধ নেই যা তিনি করেননি। তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ভয়ে আতঙ্কে থাকতেন এলাকাবাসী। তরুণীরা তার ভয়ে ঘর থেকে বের হতে সাহস পেতেন না। একপর্যায়ে সাইফুলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তার পা ভেঙে দুই চোখ নষ্ট করে দেয়। এসময় তার চিকিৎসায় বাবাও এগিয়ে আসেননি। পরে পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে।
ঢাকায় গিয়ে ছিনতাইকারী সাইফুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে নিজেকে ‘নিরীহ যুবক’ বলে প্রচার করার চেষ্টা করেন। তিনি ও তার পরিবার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জমিজমার কাল্পনিক বিরোধের কথা বলে বিভিন্ন মামলার বাদী ও সাক্ষীদের এখন ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় শরণখোলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শরণখোলা কিশোর ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এলাকাবাসীর পক্ষে এ অভিযোগ করেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট খোন্তাকাটা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম, সাবেক ইউপি সদস্য সোলাইমান মিয়া, সাইফুলের হামলার শিকার ইব্রাহিম মোল্লা, সাইফুল ইসলাম শুকুর, আসলাম মিয়া, বাশার হাওলাদার, কলেজছাত্র রমজান হোসেনসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকালে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানাবেন।
ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন জানান, সাইফুলকে আহত অবস্থায় পাওয়ার পরে চিকিৎসার জন্য তারা বাবা নুরু মোল্লাকে জানালে প্রথমে তিনি অপরাধী ছেলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান। পরে তিনি টাকা দিয়ে সাইফুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য নুরু মোল্লাকে অনুরোধ করে খুলনায় পাঠান। কিন্তু অন্য কারো ইন্ধনে এখন তারা ভিন্ন কথা বলছেন। শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, ‘সাইফুল এলাকায় একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ডাকাত ও ছিনতাইকারী। তার কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। তার বাবা নুরু মোল্লাও ছেলের বিরুদ্ধে আমার কাছে নালিশ দিতেন। কিন্তু তারা এখন যে কথা বলছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সাংবাদিকদের উচিত যাচাই-বাছাই করে সংবাদ পরিবেশন করা।’ শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, ‘সাইফুলের নামে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। তবে কারা তার পা ভেঙে চোখ নষ্ট করে দিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তার পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ দিলেই মামলা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও শরণখোলা থানার ওসি সাইফুলের চিকিৎসায় তার বাবা ও আত্মীয়স্বজন কেউ আসছেন না বলে জানালে মানবিক বিবেচনায় তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।