করোনায় বিশ্বজুড়ে ইস্পাত উৎপাদন কমলেও ব্যতিক্রম চীন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী গত বছর বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন খাতে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করে। লকডাউনে দেশে দেশে কারখানা সাময়িক বন্ধ রাখা, শ্রমিক সংকটে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে। গত বছর বিশ্বজুড়ে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। এ সময় ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ দেশে ইস্পাত উৎপাদন কমে এলেও ব্যতিক্রম ছিল চীন। করোনাকালে চীনের ইস্পাত উৎপাদন খাত ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর মেটাল বুলেটিন ও রয়টার্স।
ডব্লিউএসএর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে ১৮৬ কোটি ৪০ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন কমেছে দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে ১৮৮ কোটি ১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। চলতি শতকে এটাই ছিল বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
চীন বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ। গত বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ১০৫ কোটি ৩০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে ২০২০ সালে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনের ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে চীন। এর আগের বছর বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনের ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ এককভাবে জোগান দিয়েছিল চীন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীতে সবার আগে লকডাউন ঘোষণা করেছিল চীন। ওই সময় চীনা ইস্পাত উৎপাদন খাত সংকটে পড়েছিল। তবে দ্রুতই সংকট কাটিয়ে ওঠে দেশটি। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে চীনে ইস্পাত উৎপাদন গতি ফিরে পায়। পূর্ণ উদ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করায় করোনাকালীন লোকসান কাটিয়ে উঠে বছর শেষে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে চীনের ইস্পাত কারখানাগুলো।
ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারত ও জাপান। ডব্লিউএসএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ভারতের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ৯ কোটি ৯৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সময়ে জাপানে ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৮ কোটি ৩২ লাখ টনে নেমে এসেছে।
একই অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও। বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় গত বছর সব মিলিয়ে ৬ কোটি ৭১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ৭ কোটি ২৭ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময়ে ব্রাজিলে উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ১০ লাখ টন ইস্পাত, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কম।
চীনের পাশাপাশি গত বছর রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানে ইস্পাত উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল। ডব্লিউএসএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে রাশিয়ায় উৎপাদন হয়েছে ৭ কোটি ৩৪ লাখ টন ইস্পাত, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এ সময় তুরস্ক ও ইরানে যথাক্রমে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ও ২ কোটি ৯০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে তুরস্কে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে ৬ শতাংশ। ইরানে বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
ডব্লিউএসএ বলছে, করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি ভারত, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ দেশের ইস্পাত উৎপাদন শিল্প। এ চিত্র উঠে এসেছে এসব দেশে শিল্প ধাতুটির বার্ষিক উৎপাদনের হিসাবে। তবে চীনা ইস্পাত খাত মহামারীর মধ্যেও শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে নতুন নজির গড়েছে।