বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স নয়, যেভাবে দেখছেন তারা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্সের পরিবর্তে ডিগ্রি পাস কোর্স, কারিগরি কোর্সসহ বিভিন্ন কার্যকর ডিপ্লোমা কোর্স খোলার পরিকল্পনা করছে সরকার।
এর আগে, সদ‌্য বিদায়ী বছরের (২০২০) ২৯ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের বেসরকারি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে, নতুন করে এসব প্রতিষ্ঠানে চালু করা হবে কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন কোর্স। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বেসরকারি অনার্স কলেজে লেখাপড়া করে অনেকেই চাকরি পান না। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিরাট একটা ব্যবধান তৈরি হয়ে যায়। যারা এই প্রক্রিয়ার (বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স) মধ্য দিয়ে যান, তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়।
মোস্তফা কামাল নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। ঠিক আছে। তবে আমাদের যাদের ফল ভালো হয় না, তাদের বেসরকারি ছাড়া অন্য কোথাও গতি থাকে না। আর বেসরকারিতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, সেটা তো বলেও শেষ করা যাবে না। আবার চাকরির বেলায়ও হতাশ হতে হয়।’
মাঈনুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বেসরকারি কলেজে পড়ে আমরা সনদ পাই। কেউ কেউ চাকরিও পাই। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। সনদের যথাযথ মূল্যায়ন আসলে পাওয়া যায় না। তাই বেসরকারিতে ডিগ্রি পাস কোর্সগুলো রেখে অনার্স-মাস্টার্স সরকারি কলেজে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে ভালো বলে মনে করি।’
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেসরকারি কলেজগুলোকে আরও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি পরিমাণে প্রায়োগিক জ্ঞান পাবেন। যেটা তাদের চাকরি পেতে সহায়ক হবে। দেশও উপকৃত হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘এখন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এজন্য বহুমুখী উদ্যোগ জরুরি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্কুল-কলেজগুলোতে পাঠ ও কারিকুলামকে কর্মবান্ধব করে তোলা। এজন্য বেসরকারি কলেজগুলোয় কারিগরি শিক্ষা যোগ করা উচিত।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মতে, বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স করে অনেককে ভালো চাকরি পেতে কষ্ট হয়। অভিভাবকদের জন্য এই খবর সুখের নয়। সন্তানকে পড়ালেন, তাদের একটি চাকরির প্রত্যাশা থাকে, চাকরি হয় না। কোনো কিছু করবেন, তার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা তারা অর্জন করতে পারেন না। সেসব সমস্যার সমাধান জরুরি।’
দীপু মনি আরও বলেন, ‘আমরা আর সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছেন। কাজেই যারা অনার্স-মাস্টার্স করবেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করবেন। ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন শর্টকোর্সও খোলা হতে পারে।
উল্লেখ‌্য, ডিগ্রি স্তর পর্যন্ত পরিচালিত মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও)ভুক্ত কলেজগুলোয় ১৯৯৩ সালে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সারাদেশে মোট ৩১৫টি সরকার অনুমোদিত বেসরকারি কলেজ রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিধিবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত স্কেলে শিক্ষকদের মূল বেতন দেওয়ার শর্তে অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় অনুমোদন নেয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কলেজের টিউশন ফি থেকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে।