বেনাপোল স্থলবন্দরের সক্ষমতার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ২০ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, যা থেকে সরকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষও আলাদা রাজস্ব পায়। অথচ আমদানীকৃত এসব পণ্যের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। প্রতিনিয়ত পণ্য চুরি হচ্ছে বন্দর থেকে। ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বন্দরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হলেও কোনো সুফল মেলেনি। এতে আস্থা হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বন্দরের পণ্য রাখার সক্ষমতা বাড়লে রাজস্ব আহরণও বাড়ত।ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর চার যুগেও সিসি ক্যামেরার আওতায় আসেনি দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই বসানো হচ্ছে না সিসি ক্যামেরা। এতে চুরিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আমদানি-রফতানিকারকরা।
জানা গেছে, বর্তমানে বন্দরের শেডটিতে খাদ্যদ্রব্য পণ্য থাকে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে, বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডে আমদানীকৃত মোটরসাইকেল পার্টস রাখা হবে বলে জানিয়েছে। তারা বলছে, এতে পার্টস বেশি আমদানি হলে সরকারের যেমন রাজস্ব আসবে, তেমনি বন্দরের পণ্যজট কমে আসবে।
বন্দর এলাকা ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমদানি পণ্যে প্রবেশদ্বারসহ দুই কিলোমিটার বন্দর এলাকাজুড়ে কোথাও সিসি ক্যামেরা নেই। প্রয়োজন ছাড়া বন্দরের মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও অবাধে যাতায়াত করছে বহিরাগতরা। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর দায়িত্ব পালনের সময় চোর সিন্ডিকেটের হামলায় ফিরোজ নামে একজন আনসার সদস্য খুন হন। আর চোরাই পণ্য কেনাবেচার জন্য বন্দরের সামনেই নামে-বেনামে শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে।
বেনাপোল বন্দরের আনুষ্ঠানিক শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। ২০০২ সালের ফেরুয়ারি থেকে এটি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হতে শুরু করে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই এখানে চোরের দৌরাত্ম্য আছে। চোর চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী, ক্যাডার, সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, প্রতিটি সভায় উন্নয়নের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখানে কোনো নজরদারি নেই। অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দরসংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়ীর দীর্ঘদিনের দাবি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। ব্যবসায়ীদের সে দাবির মুখে পূরণ করার কথা বলা হলেও তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না। অথচ পণ্য চুরি হওয়ায় আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। আবার আমদানীকৃত পণ্য রাখার জায়গা সংকট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সময়মতো পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছেন না। বন্দরের ব্যবস্থাপনা ভালো থাকলে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বাড়ত।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, কলকাতা থেকে বেনাপোলের দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। যে কারণে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পণ্য নিয়ে আসেন। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা লাগাতে বন্দর কর্তৃপক্ষের অনীহা কেন বুঝি না। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, বন্দরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। আর নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরের আরো শেড নির্মাণ করা হবে।