সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে যশোরের গোটা মাঠ মুখরিত

0

আকরামুজ্জামান ॥ সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে যশোরের গোটা মাঠ মুখরিত হয়ে উঠেছে। যে দিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই দেখা মিলছে হলুদের চাদরে ঢাকা মাঠ। প্রকৃতি যেন তার সব হলুদ রঙ ঢেলে দিয়েছে বিস্তীর্র্ণ মাঠ জুড়ে। কৃষি বিভাগ বলছে, একসময়ে ধান আবাদের কারণে মানুষ সরিষার আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলার অধিকাংশ চাষি এখন অন্য ফসলের সাথে সরিষা আবাদ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গত মৌসুমের চেয়ে সামান্য কম। এর কারণ হিসেবে কৃষি বিভাগ বলছে, গত বছর থেকে বাজারে ধানের দাম কিছুটা বেশি থাকায় কৃষকরা সরিষা আবাদ কিছুটা কমিয়ে দিয়ে ধান আবাদ করেছেন। তবে বিগত দুই বছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে সরিষা আবাদ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। অল্প সময়ের ব্যবধানে সরিষা আবাদ বেড়ে যাওয়াকে ধান আবাদের লোকসানকে কারণ হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ। চাষিরা জানান, এক সময়ে যশোরে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ হতো। প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে সরিষা আবাদ থেকে সরে এসে কৃষক ধান আবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ফলে বলা চলে বিলুপ্ত হয়ে যায় সরিষা আবাদ। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে কৃষক এখন আবার সরিষা আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। জেলার প্রায় সব এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন হলুদ আর সবুজ রঙের সমাহার। আমন ধান কেটে একই ক্ষেতে সরিষা আবাদ করেছেন চাষিরা। বিস্তীর্ণ মাঠে হলুদের সমাহার দেখে মনে হচ্ছে সরিষা আবাদ এবার ভালো হবে। যশোর সদর ও বাঘারপাড়ার বিশাল অংশ মিলে বিল জলেশ্বরের অংশে এ বছরও বিপুল পরিমান জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। গত বছর এই বিলে সরিষা আবাদ করে চাষিরা বেশ লাভবান হন। এ কারণে এবার চাষির সংখ্যাও বেড়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুল্যা গ্রামের মাঠে কথা হয় সরিষা চাষি এয়াকুব আলীর সাথে। তিনি বলেন, আমন ধান কেটে ওই জমিতে আবার সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এই মাঠে এর আগে সরিষা আবাদ হতো। কিন্তু প্রায় দশ বছর ধরে তারা সরিষা আবাদ না করে সেখানে ধান আবাদ করে আসছেন। গত মৌসুম থেকে আবার সরিষা আবাদ শুরু করেছেন। এবছর বেশ ভালো ফলন পাবার আশা করা যাচ্ছে। একই কথা বলেন নজির আলী। তিনি বলেন, ধান আবাদের লাভ-লোকসানের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় না। কখন দাম বাড়ে আবার কখন কমে যায় তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে সরিষা আবাদ করে লোকসানের আশঙ্কা কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লোকসান নেই বললে চলে। তাছাড়া সরিষা আবাদে খরচ কম এবং লাভ বেশি। দুই তিনবার সেচ দিলেই চলে। এক মণ সরিষা ১৮’শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি সম্ভব। এ কারণে তারা এখন শাক-সবজির পাশাপাশি সরিষা আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি এ বছর সরিষার ভালো ফলন হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। আমজাদ হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, তিনি সরিষা তুলে একই জমিতে বোরো আবাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি বলেন, সরিষা চাষ করে একদিকে যেমন মানসম্মত ভোজ্য তেল পাওয়া যায় তেমনি ভালো দামে বিক্রি করে লাভবানও হওয়া যায়া। কারণ বাজারে যেসব তেল বিক্রি হয় তার অধিকাংশ ভেজাল। এ জন্য সরিষা আবাদের প্রতি সবার আগ্রহ বাড়ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) দীপঙ্কর দাস বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জমির উর্বরতা ধরে রাখার জন্য শস্য নিবিড়তার জন্য কৃষককে সরিষা আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ সরিষা আবাদ করে একই জমিতে সহজেই তিন ফসলের চাষ করা সম্ভব। এজন্য অধিকাংশ কৃষককে সরিষা আবাদের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর সরিষা আবাদের যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাতে আশা করা যায় নিকট অতীত যেকোন সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ ফলন হবে।