হাসিনা-মোদি বৈঠকে গুরুত্ব পাবে যেসব ইস্যু

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রায় এক বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে বসছেন আজ। তবে করোনা মহামারির কারণে দু’দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠকটি এবার ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, কোভিড মোকাবিলায় সহযোগিতা, সীমান্তে হত্যা বন্ধ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি সমস্যাসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয় প্রাধান্য পাবে এই বৈঠকে। এছাড়া আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে শীর্ষ বৈঠকে। এবারের শীর্ষ বৈঠকে গুরুত্ব পাবে কোভিড মোকাবিলায় ভারতের সহযোগিতা। বাংলাদেশকে উৎপাদিত কোভিড টিকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। এর পাশাপাশি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বৈঠক শেষে ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। জানা গেছে, কয়েকটি এমওইউ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে- হাতি সংরক্ষণ, বরিশালে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প ও জ্বালানি সহযোগিতা (হাইড্রোকার্বন)। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আগে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী চুক্তিগুলো সই করবেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে ভারতের পোস্টাল বিভাগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর ওপর স্ট্যাম্প উদ্বোধন করা হবে। বঙ্গবন্ধু-মহাত্মা গান্ধী ডিজিটাল মিউজিয়ামের ওপর একটি প্রমো প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া ৫৫ বছর পরে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেললাইন সংযোগ একটি ট্রেন ফ্যাগ অফের মাধ্যমে পুনরায় চালু হবে। এবারের বৈঠকে প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে রয়েছে ইনফরমেশন টেকনোলজি, স্পেস, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সসহ অন্যান্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়।
সূত্র জানায়, এবারের শীর্ষ বৈঠকে পানি বণ্টন, কোভিড মোকাবিলায় সহযোগিতা, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য, বিদ্যুতের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। মনু, মুহুরি, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার, ফেনী ও তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যু নিষ্পত্তিতে একটি কাঠামো তৈরি এবং আগামী মাসেই যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। জেআরসি বৈঠকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হবে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করতে ভারতীয় উদ্যোগ প্রত্যাশার কথা জানাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারতের ঋণের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কালেও ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সোনালী অধ্যায়। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট উদ্বোধন হবে। আমাদের বড় বড় ইস্যু, যেগুলো সব সময় আমরা তুলে থাকি সেই ইস্যুগুলো উত্থাপন হবে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ভারতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কবিষয়ক এক ওয়েবিনারেও এ প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। জানা গেছে, আজকের শীর্ষ বৈঠকেও এ বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ভারত আগামী মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করবে। বাংলাদেশ আশা করছে, ভারত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রস্তাব আনবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদির ১৭ই মার্চ ঢাকা আসার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়। আজকের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে আগামী মার্চে তাকে ঢাকা সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হবে।