ঘটনাবহুল একদিন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাকালে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিলো দেশের রাজনীতি। জীবন আগে না জীবিকা, এ নিয়ে চায়ের কাপে উঠেছিল ঝড়। কিন্তু শীত আসতেই ঠান্ডা হবার বদলে হঠাৎ করেই যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজপথ। সরকারি দল যখন পদ্মাসেতু গড়ার সাফল্য নিয়ে খোশমেজাজে, বিরোধীরা তখন রাজপথ কাঁপানোর ডাক দিচ্ছেন। বিশেষ করে দেশের রাজনীতিতে রবিবার ছিল ঘটনাবহুল। একের পর এক ঘটনা নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
‘দেশের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক’, জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘এ ব্যাটল ফিল্ড ফ্রিডম ফাইটার অফ ১৯৭১’ ব্যানারে এক মতবিনিময় সভায় বক্তাদের বক্তব্যের বরাতে রবিবার এই সংবাদ শিরোনাম করে মানবজমিন। উক্ত অনুষ্ঠানে ১৮ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন যাদের প্রায় সবাই দেশের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। সভার সভাপতি এবং বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
গৃহযুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। দেশ আফগানিস্তান হলে বা গৃহযুদ্ধ হলে তার জন্য দায়ী হবে আওয়ামী লীগ সরকার। দুঃশাসনের অবসান হওয়া প্রয়োজন। দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাইলে গণভ্যুত্থানের বিকল্প নাই। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সহ অন্য বক্তারাও একই সুরে কথা বলেন। সভার অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। অনেকদিন পর তাকে স্বরূপে পাওয়া যায়। তার বক্তব্য, বাংলাদেশে ভয়ভীতি বিরাজ করছে। সরকার লুটপাটতন্ত্র চালু করেছে। মানুষের মুক্তি মানেই গণতন্ত্রের বিজয়। আমরা এখন যে বিজয় দিবস পালন করছি সেটা আমাদের বিজয় নয়। আন্দোলনে সবার সঙ্গে আছেন বলে জানান দেন সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এভিএম ফখরুল আজম।
রবিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অন্য এক আলোচনা সভায় কর্নেল অলি বলেন, আশা নিয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য সর্বপ্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহ করি। মনে করেছিলাম, দেশ স্বাধীন হলে, আমাদের আর কোনো দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না। কিন্তু আজ সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে নিজের ইজ্জত সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য খেতাব পেয়েছি। কিন্তু পদে পদে আমাদেরকে অসম্মান করা হচ্ছে। বর্তমান অবস্থা মানুষের সহ্য ও ধৈর্য্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি খুব দ্রুতই একদলীয় শাসনের অবসান হবে। উক্ত আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহাজান ওমর, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে রবিবার এলডিপি নেতা (একাংশ) শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, সাবেক হুইপ আবদুল করিম আব্বাসীকে সভাপতি ও শাহাদাত হোসেন সেলিমকে মহাসচিব করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র (একাংশ) ৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৪ জানুয়ারি এলডিপি’র কাউন্সিল অধিবেশনে হলেও রবিবার পুরো কমিটি ঘোষণা করা হয়। রবিবারই গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, গণফোরামের মধ্যে এযাবৎ যেসব বহিষ্কার পাল্টা–বহিষ্কার হয়েছে, তা এখন থেকে অকার্যকর হিসেবে গণ্য হবে। চলমান সমস্যার সমাধানে জাতীয় কাউন্সিল হবে।
রবিবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকে আবার বলছিলেন, গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মান্নার বাসায় গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয় নি। মান্না সোমবার গণমাধ্যমকে জানান, রোববার তার গুলশানস্থ বাসার আশপাশে প্রচুর লোকজন ছিল। রাত ১২টার পর পুলিশ তার বাসায় আসে। তারা বাসার দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে বিভিন্ন তথ্য জানতে চায়। বাসায় প্রশাসনের লোক, সাংবাদিক বা আর কেউ এসেছিলেন কি না তা জানতে চায়। পুলিশ অবশ্য তার সঙ্গে দেখা করতে চায়নি। খোঁজখবর নিয়েই তারা চলে যায়। রবিবার কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ১৬ই জানুয়ারি প্রথম আলো সম্পাদক, কিশোর আলো সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল পুলিশ।
এদিকে রবিবার র‍্যাব এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের অপকর্মের তথ্য জেনে যাওয়ায় থানায় বসেই মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে। রবিবারের নাটকীয়তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই যেন সোমবার দুপুরে হঠাৎ করে রাজধানীর গুলিস্তান ও পল্টনে বিক্ষোভ হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন সেখানে তাদের দলীয় কোন কর্মসূচি ছিল না। এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সভা-সমাবেশে অংশ নেয়ার অভিযোগে বিএনপির সিনিয়র একজন নেতাকে দলটি শোকজ করেছে বলে জানা গেছে। আরেক সূত্রমতে, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক কোন সভা-সমাবেশে যোগদান থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড।