শ্যামনগরে এজিএম মধুসুদনের যোগসাজসে পল্লী বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল, গ্রাহকরা অতিষ্ঠ

0

শেখ আব্দুল হাকিম. শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) ॥ সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সেবা নিয়ে ও ভুতুড়ে বিলে গ্রাহকদের মধ্যে নানা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের দাবি এজিএম মধুসুদনের যোগসাজসে এই ভুতুড়ে বিল তৈরি করছেন রিডাররা। আর অতিষ্ঠ গ্রাহক সংশোধনের জন্যে গেলেও পাচ্ছেন না সঠিক প্রতিবার। শ্যামনগর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস থেকে প্রতিনিয়ত ভুতুড়ে বিল দেয়ায় গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে এজিএম (ওএন্ডএম) মধুসুদন রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামনগরের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভুতুড়ে বিল সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, রিডারম্যানরা গ্রাহকদের মিটার রিডিং না দেখে মনগড়া অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করে বিলি করছে। ফলে এক দিকে যেমন গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির স্বীকার হচ্ছে অপর দিকে গ্রাহকদের সাথে বিদ্যুতের কর্মকর্তা এজিএম মধুসুদন রায় ও বিল প্রস্তুতকারী খাদিজা বেগমের সাথে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা বিপত্তি। গ্রাহকরা জানান, মিটারের ব্যবহৃত ইউনিট ছাড়া অতিরিক্ত ইউনিটসহ বিল প্রস্তুত করে বাড়িতে এসে হাতে ধরিয়ে দেয়। আবার গ্রাহকদের শ্যামনগর পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসে বিল সংশোধনের জন্য দীর্ঘ লাইন দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এক পর্যায় অফিসের বিল প্রস্তুতকারী খাদিজার নিকট গ্রাহকরা পৌঁছে ভুতুড়ে বিল সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের সাথে খারাপ আচারণ করেন। বিল সংশোধন নিয়েও নানা তালবাহানা শুরু করেন। এ ব্যপারে এজিএম মধুসুদন রায়কে অবহিত করেও ভুক্তভোগীরা কোন প্রতিকার পায়নি বলে জানান। এদিকে ভুতুড়ে বিলের কারণে গ্রাহকদের বিল পরিশোধে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে আর এর সুযোগ নিয়ে পাওয়ার ইউজ কো-অডিনেটর আব্দুল মোতালেব গ্রাহকদেরকে না জানিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করছেন। সংযোগ ফিরে পেতে গ্রাহকদের অতিরিক্ত ৬শত ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে।
উপজেলা বাধঘাটা গ্রামের নুরুল ইসলাম (খোকন) জানান, তার মিটারে গত অক্টোবর মাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ৭ শত টাকা। কিন্তু নভেম্বর মাসে ভুতুড়ে বিল আসে ৫৪ হাজার ৮ শত টাকা। পরবর্তিতে বিদ্যুৎ অফিসে যেয়ে নানা জটিলতার অবসান ঘটিয়ে তবেই বিল সংশোধন করে ৭ শত টাকা বিল পরিশোধ করেন। রামজীবনপুর গ্রামের আবু ইছা জানান, জুলাই মাসের ভুতুড়ে বিল সংশোধন করে ৬ হাজার ৫ শত টাকার বিল পরিশোধ করেন। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে আবারো পূর্বের পরিশোধিত বিল নতুন বিলের সাথে টাকা যোগ করে দিয়েছে।
বাধঘাটা মনোয়ারা বেগম জানান, আমার বাড়ির মিটারে ভুতুড়ে বিল আসায় বিল পরিশোধ করতে দেরি হওয়ায় বিদ্যুৎ লাইনটি বিছিন্ন করে দিয়েছে। দরগাপুর গ্রামের জিয়াউর রহমান জানান, আমার নামীয় বিদ্যুৎ মিটারে ভুতুড়ে বিল আসায় বিল নিয়ে কয়েকবার বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে ধর্না দিয়েও বিলটি সংশোধন করতে না পারায় আমাকে না জানিয়ে মিটারটি বিছিন্ন করে দেয়। পরে ভুতুড়ে বিল পরিশোধ করলে সাড়ে ৬ শত টাকা জরিমানা দিলে বিদ্যুৎ লাইনটি লাগিয়ে দেয়। বংশিপুর গ্রামের মাস্টার নজরুল ইসলাম জানান, পরিশোধ কৃত বিলের টাকা পরবর্তী মাসের বিলের মধ্যে যুক্ত করে দিয়েছে। কৈখালির সাবেক চেয়ারম্যান এসকে শাহজান সিরাজ জানান, তার ভুতুড়ে বিল করায় সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে
গেলে বিশাল লাইন দেখে বিলটি সংশোধন না করে সমুদয় টাকা কৃষি ব্যাংকে পরিশোধ করেন। এ ঘটনায় সাতক্ষীরার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শ্যামনগর জোনাল অফিসের দায়িত্বরত এজিএম (ওএন্ডএম) মধুসুদন রায়ের সাথে মুঠো ফোনে ভুতুড়ে বিল ও বিল প্রস্তুতকারী খাদিজা কর্তৃক গ্রাহকদের সাথে অসদাচরণ করার বিষয়ে জানতে চাহিলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। তবে স্থানীয় গ্রাহকরা ভুতুড়ে বিলে অতিষ্ঠ হয়ে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে শ্যামনগর জোনাল অফিসের দায়িত্বরত এজিএম (ওএন্ডএম) মধুসুদন রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।