কয়লার রেফারেন্স মূল্য ৭% বাড়াল ইন্দোনেশিয়া রফতানি লক্ষ্য পূরণ নিয়ে শঙ্কা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥চলতি বছরের ডিসেম্বরের জন্য রফতানিযোগ্য কয়লার (থার্মাল কোল) রেফারেন্স মূল্য আগের মাসের তুলনায় ৭ শতাংশ বাড়িয়েছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। মূলত জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতের মতো শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোয় ইন্দোনেশীয় কয়লার বাড়তি চাহিদার জের ধরে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির রেফারেন্স মূল্য বাড়ানো হয়েছে। তবে সংশয় রয়ে গেছে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির বার্ষিক রফতানি লক্ষ্য পূরণ নিয়ে। খবর জাকার্তা পোস্ট ও এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল।
কয়লা উত্তোলনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান ষষ্ঠ। তবে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দেশটি দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। গত বছর কয়লার মোট বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের ১৮ দশমিক ২ শতাংশ দেশটি এককভাবে জোগান দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার মিনিস্ট্রি অব এনার্জি অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেসের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের জন্য থার্মাল কোলের রেফারেন্স মূল্য টনপ্রতি ৫৯ ডলার ৬৫ সেন্ট নির্ধারণ করা হলো। জ্বালানি পণ্যটির এ রেফারেন্স মূল্য স্থানীয়ভাবে এইচবিএ নামে পরিচিত।
এর মধ্য দিয়ে নভেম্বরের তুলনায় চলতি মাসে ইন্দোনেশিয়ায় কয়লার রেফারেন্স মূল্য ৭ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি ডিসেম্বরে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির রেফারেন্স মূল্য ১০ শতাংশ কম রয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় থার্মাল কোলের রেফারেন্স মূল্য ছিল টনপ্রতি ৫৫ ডলার ৭১ সেন্ট। আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির এ মূল্যহার ছিল টনপ্রতি ৬৬ ডলার ৩০ সেন্ট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মতো দেশগুলোয় শিল্পোৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে এসব দেশে কয়লা রফতানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকে জ্বালানি পণ্যটির রেফারেন্স মূল্য বাড়ানো হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে ইন্দোনেশিয়া থেকে চীনের বাজারেও কয়লা রফতানি বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ইন্দোনেশিয়ার খনিগুলো থেকে সব মিলিয়ে ৪৫ কোটি ৯০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন হয়েছে বলে অন্য এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির মিনিস্ট্রি অব এনার্জি অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস। এ সময় ইন্দোনেশিয়ায় জ্বালানি পণ্যটির অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৯০ লাখ টনে।
গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় সব মিলিয়ে ১৩ কোটি ৮০ লাখ টন কয়লা ব্যবহার হয়েছিল বলে জানিয়েছে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়। আর চলতি বছর দেশটিতে কয়লার বার্ষিক ব্যবহার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল ১৫ কোটি ৫০ লাখ টন। ফলে ২০২০ সাল শেষে কয়লার অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে থাকবে ইন্দোনেশিয়া।
যদিও করোনা মহামারীর ধাক্কা লেগেছে ইন্দোনেশিয়ার কয়লা রফতানি খাতে। শ্লথতা নেমে এসেছে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২৩ কোটি ২৩ লাখ টন কয়লা রফতানি হয়েছে। বছরের প্রথম ১০ মাসে দেশটি থেকে বার্ষিক লক্ষ্যের ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ কয়লা রফতানি হয়েছে।
২০২০ সালজুড়ে সব মিলিয়ে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টন কয়লা রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ইন্দোনেশিয়া সরকার। এরই মধ্যে ১০ মাসের রফতানি তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। রফতানি হয়েছে সোয়া ২৩ কোটি টন কয়লা। লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বাকি দুই মাসে (নভেম্বর ও ডিসেম্বর) আরো ১৬ কোটি টনের বেশি কয়লা রফতানি করতে হবে। এটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তাই খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর কয়লা রফতানিতে লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে না ইন্দোনেশিয়া।