ই-পাসপোর্টে ভোগান্তি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অবশেষে ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুতেই দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। ই-পাসপোর্টের সফটওয়্যার, ছবি তোলা, মোবাইলে আবেদন, সঠিক সময়ে আবেদন ডেলিভারি না দেয়া, অধিকাংশ আবেদনকারীর ই-পাসপোর্টের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না জানা এবং অযথা বিভাগীয় ও আঞ্চলিক অফিসে ভিড় করায় নানা চাপে রয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ই-পাসপোর্টের কারিগরি মান বাড়লেও কর্মীদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। যেসব কর্মকর্তা এবং কর্মচারী এমআরপি পাসপোর্টের কাজ করতেন অধিদপ্তর তাদের দিয়েই ই-পাসপোর্টের সেবা দিচ্ছেন। এ ছাড়াও বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় প্রযুক্তির বিষয়টি জড়িত। অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রজেক্টটি নতুন। কর্মীরা আস্তে আস্তে দক্ষ হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুত সংকট কেটে যাবে।
এ ছাড়াও তারা আবেদন করার সময় ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে আবেদনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে দেশের সকল বিমানবন্দরে ই-পাসপোর্টের সেবা শুরু হয়েছে। চলতি বছরে প্রাণঘাতী করোনার কারণে গত ২৬শে মার্চ থেকে সব কার্যক্রম বন্ধ হলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার পুরোদমে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আনোয়ার হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, অনলাইনে তিনি আবেদন করেন। প্রিন্ট কপিটি নিজে গিয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের সদর দপ্তরে জমা দেন। তার ছবি তোলার সময় পড়ে ২৩শে আগস্ট। ওই তারিখে ছবি তোলেন। ছবি তোলার পর কর্মকর্তারা জানান যে, ২১ দিন পর তিনি পাসপোর্ট পাবেন। কিন্তু, তিনি এখন পর্যন্ত পাসপোর্ট পাননি। কর্মকর্তারা জানান, আপনার পাসপোর্ট রেডি হলে মোবাইলে এসএমএস পাবেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এসএমএস পাননি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও পরিদর্শন) মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘ই-পাসপোর্টে টেকনিক্যাল সমস্যা রয়েছে। সরকার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে।’ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। দেশের ৪৩টি পাসপোর্ট অফিসে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন মূলত যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, সফটওয়্যারের সমস্যা।
সূত্র জানায়, অনেকে মোবাইল ফোন থেকে আবেদন করার চেষ্টা করেন। এতে সফটওয়্যারে সমস্যা দেখা দেয়। ই-পাসপোর্ট করার জন্য যে সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে তাতে রাজধানীতে যে থানাগুলো রয়েছে সেসব থানার নাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু, পরে বড় থানা ভেঙে নতুন একাধিক থানা করেছে কর্তৃপক্ষ। সেসব নতুন থানার নাম সফটওয়্যারে না থাকায় আবেদনকারী যখন নতুন থানার নাম দিচ্ছেন তখন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ই-পাসপোর্টের কর্মচারীদের। কারণ, সফটওয়্যারে একটি ডট বদলানোও কঠিন। সূত্র জানায়, অনেকে আবেদন করার সময় ইন্টারনেট সমস্যা দেখা দেয়। এতে আবেদনে সমস্যা তৈরি হয়। আবার অনেক আবেদনকারী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আবেদন করেন। কিন্তু, সেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের সিস্টেমে প্রবেশ করা যায় না। আবেদনকারী কারও কারও জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা এক স্থানে। কিন্তু, আবেদন করেছেন অন্যস্থান থেকে। এ ছাড়াও ই-পাসপোর্টের মেশিনে বারকোডের প্রিন্টে কালি না পড়ায় সেগুলো মেশিন রিড করতে পারছে না। অনেকের ১০ আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট না হওয়ায় সেগুলো মেশিন রিড করতে না পারায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষ সবার প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন, যেসব আবেদনকারী ই-পাসপোর্টের আবেদন করবেন তারা যাতে কম্পিউটারে আবেদন করেন। সূত্র জানায়, প্রতিদিন ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট প্রিন্ট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দিন দিন আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যা বাড়ার কারণে ই-পাসপোর্টে জট বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রযুক্তিগত ও জনবলের সমস্যা কাটিয়ে ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করছে। সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টের বিষয়ে জনগণ যাতে সচেতন হয় এজন্য পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।