শীত মৌসুমেও কমতির দিকে এলএনজির দাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রতি বছর শীত মৌসুমে এশিয়ার দেশগুলোয় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বৃদ্ধির চাপ সামলাতে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশির ভাগ দেশ এ সময় বাড়তি এলএনজি আমদানি করে। এর জের ধরে বাড়ে জ্বালানি পণ্যটির দামও। চলতি বছর এসব দেশ কিছুটা আগেই এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অক্টোবরের শেষের দিকে এশিয়ার বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। এর পর থেকে এলএনজির দাম অনেকটাই কমেছে। এ পরিস্থিতিতে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শীতকালীন চাহিদা বৃদ্ধির চাপ এরই মধ্যে মোকাবেলা করেছে এলএনজির বাজার। আগামী দিনগুলোয় এশিয়ার বাজারে এলএনজির চাহিদা হয়তো খুব একটা বাড়বে না। দামও থাকতে পারে নাগালের মধ্যে। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এলএনজির শীর্ষ তিন আমদানিকারক। এসব দেশে যত বেশি শীত পড়ে, জ্বালানি পণ্যটির দাম ততই বাড়তে থাকে। কেননা শীতের আগেই এসব দেশ এলএনজি আমদানি করে রাখে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শীত শুরুর আগেই আমদানি বাড়তির পথে থাকায় এশিয়ার বাজারে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (২৭ দশমিক শূন্য ৯৬ ঘনমিটার) এলএনজির গড় দাম উঠেছিল ৭ ডলার ৫০ সেন্টে। চলতি বছর এশিয়ার বাজারে এটাই জ্বালানি পণ্যটির সর্বোচ্চ দাম।
২০ নভেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে এশিয়ার বাজারে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির গড় দাম ৬ ডলার ৪০ সেন্টে নেমে এসেছে। এর আগের সপ্তাহেও এশিয়ার বাজারে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির গড় দাম ছিল ৬ ডলার ৮৫ সেন্ট। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে জ্বালানি পণ্যটির গড় দাম কমেছে ৪৫ সেন্ট। আর বছরের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে কমেছে ১ ডলার ১০ সেন্ট।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেম্বরের শেষ সময়ে এসে বেশির ভাগ দেশে শীত শুরু হয়ে গেছে। এখন মূলত ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে সরবরাহ চুক্তিতে এলএনজি বিক্রি হচ্ছে। তাই শীতের বাড়তি চাহিদার চাপ সামাল দিতে ক্রেতা দেশগুলো অক্টোবরেই এলএনজি আমদানি করে ফেলেছে। মূলত এ কারণে গত মাসের শেষ সপ্তাহে এশিয়ার বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে উন্নীত হয়েছিল। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে এলএনজির দাম। চাহিদায় বড় ধরনের উত্থান দেখা না গেলে আগামী দিনগুলোতেও এশিয়ার বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমতির দিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে এশিয়ার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্মিলিতভাবে ৩৬ লাখ টন এলএনজি আমদানি করেছে। এ সময় মার্কিন উপকূল থেকে এশিয়া অভিমুখে ৫১টি এলএনজিবাহী জলযান এসেছে, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ। ১-২৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এশিয়া অভিমুখে ৪২টি কার্গোতে সব মিলিয়ে ২৯ লাখ ৭০ হাজার টন এলএনজি এসেছে। যেখানে গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এশিয়ার দেশগুলো ১৯ লাখ টন এলএনজি আমদানি করেছিল।
জাপান বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক দেশ। অক্টোবরে দেশটি সব মিলিয়ে ৫৮ লাখ ১০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছে। তবে চলতি মাসে দেশটি জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বাড়িয়ে ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টনে উন্নীত করতে পারে।
চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনা আমদানিকারকরা আটটি কার্গোতে সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমদানি করা এসব এলএনজি চীনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় চীনের অবস্থান দ্বিতীয়। চলতি মাসে দেশটি সব মিলিয়ে ৭১ লাখ ৪০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করতে পারে।
অন্যদিকে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় গত অক্টোবরে জ্বালানি পণ্যটির আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টন। নভেম্বরে দেশটি সব মিলিয়ে ৩৬ লাখ টন এলএনজি আমদানি করতে পারে।