ভুয়া নবাবের টাকার সন্ধানে পুলিশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কথিত ভুয়া নবাব আলী হাসান আসকারীর প্রতারণার যেমন কূলকিনারা মিলছে না ঠিক তেমনি তার টাকার সন্ধানও মিলছে না। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এখন পর্যন্ত তার একাধিক নাম ব্যবহার করে প্রতারণার তথ্য পেয়েছেন। সারা দেশে এখন পর্যন্ত হাজারখানেক ভুক্তভোগীরও সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে ঠিক কত মানুষ তার প্রতারণার শিকার এবং তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তার সঠিক হিসাব এখনো মেলেনি। প্রতারণার টাকা কোথায় রেখেছে সেই বিষয়টা এখনো অজানা।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলী হাসান প্রতারণার মাধ্যমে কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং সেগুলো কোথায় রেখেছেন সেটি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে কিছু টাকা গচ্ছিত আছে। এর বাইরে আরো দু’টি জায়গায় টাকা আছে- এমন তথ্যও মিলেছে। শিগগিরই ওই দুই স্থানে অভিযান চালিয়ে টাকা উদ্ধার করা হতে পারে। এ ছাড়া ব্যাংকের হিসাবের তথ্যের জন্য আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির মাধ্যমে আমরা ভুয়া নবাব আলী হাসানের দেশের কোন কোন ব্যাংকে কতটি অ্যাকাউন্ট আছে, সেগুলোতে কি পরিমাণ টাকা জমা আছে সেই তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সিটিটিসি’র তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাহাড় সমান অভিযোগ জমা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় চারটি ও ঢাকার বাইরে দুইটি। আলী হাসানের প্রকৃত পরিচয়ের বিষয়ে সিটিটিসি’র কর্মকর্তারা বলেন, আলী হাসানের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। কারণ এই প্রতারকের নতুন নতুন নাম বের হচ্ছে। কোন নামটি তার আসল নাম সেটি বের করা যাচ্ছে না। আহসানউল্লাহ ট্রাস্ট থেকে বলা হয়েছে আলী হাসানের সহযোগী হিসেবে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজনই তার ভাই। এটা প্রমাণের জন্য আমরা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া তার স্ত্রীর সঙ্গেও স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে কথা হয়েছে। তার স্ত্রী মেরিনা আক্তার জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে মিরপুর এলাকায় পহেলা বৈশাখের একটা অনুষ্ঠানে আলী হাসানের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তখন আলী হাসান নিজেকে নবাব বংশের উত্তরসূরি হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলো। তার চলাফেরা ও কথাবার্তা শুনে আলী হাসানকে তার ভালো লেগেছিল তাই পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করেছে। একই বছর মেরিনা তার পূর্বের স্বামী আল মামুন হোসেনকে ডিভোর্স করেছিল। চুয়াডাঙ্গা পুলিশের মাধ্যমে তার স্ত্রী আরো জানিয়েছে, ২০০৪ সালে তারা ২৫ কোটি টাকা কাবিনে যে বিয়ের কাগজ দেখিয়েছে সেটি তারা জালিয়াতির মাধ্যমে করেছে। এবং মেরিনার প্রথম ঘরের সন্তানকে আলী হাসানের সন্তান হিসেবে দেখানোর জন্য এভিডেফিট করেছে তারা। স্বাস্থ্য সেক্টরে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গায়ও ১৩ লাখ টাকার একটা মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আলী হাসানের শ্যালক গ্রেপ্তার হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শফিকুল ইসলাম নামে আলী হাসানের আরেকটি নাম পাওয়া গেছে। এই নামটিও যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া উত্তরার যে ঠিকানা দিয়েছেন সেখানেও এসব নামের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিমান্ডে তার তিন ভাইয়ের কেউই কনফার্ম করেনি আলী হাসান তাদের ভাই। সিটিটিসি’র কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা ধারণা করছি মালয়েশিয়ায় তার আরেক স্ত্রী আছে। কারণ তার মেসেজ কনভার্সসেশনে দেখলাম একটা মেয়েকে সে আম্মু আম্মু বলে ডাকে। তার পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী দুইবার সে মালয়েশিয়ায় গেছে। তাই হতে পারে মালয়েশিয়ায় তার সেকেন্ড হোম আছে। যদিও সে আমাদেরকে বলেছেন যাকে আম্মু বলে ডাকে ওই মেয়ে তার খালা। কিন্তু আমরা সেটি বিশ্বাস করি নাই। কারণ ওই মেয়েটা মেডিকেলে লেখাপড়া করে, বয়সও কম। এই বিষয়টা পরিষ্কার হতে সময় লাগবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন একটি পাসপোর্ট থেকে ভুয়া নবাবের বিদেশ যাত্রার তথ্য পাওয়া গেছে। পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তিনি ভারতে ছয়বার ও মালয়েশিয়ায় দু’বার যান। এ ছাড়া একবার জেদ্দায় যাওয়ার তথ্য মিলেছে। আলী হাসান জানিয়েছেন, ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যেই বিদেশে গিয়েছেন। তবে জেদ্দায় গিয়েছেন ওমরাহ করার জন্য। ওমরাহ করতে যাওয়ার তিনদিন আগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিন লাখ টাকা প্রতারণা করে নেন। সেই টাকা দিয়েই ওমরাহ করতে যান। সিটিটিসি’র ইকোনমিক ক্রাইম ও হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটের অতিরিক্ত উপ- কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, অধিকতর তদন্তের জন্য নতুন করে রিমান্ডের আবেদ করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঢাকার কোন কোন ব্যাংকে তার হিসাব আছে, কত টাকা আছে সেই তথ্যের জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চিঠি দিয়েছি। আদালতের অনুমতি নিয়ে এই তথ্যটা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিতে হবে। তাই আদালতে আমরা এ সংক্রান্ত একটা আবেদন করেছি। তিনি বলেন, রিমান্ডে এনে ভুয়া নবাবের প্রকৃত পরিচয় বের করার চেষ্টা করবো। যদি স্বীকার না করে তবে ডিএনএ টেস্ট করে পরিচয় শনাক্ত করা হবে।