শ্রমিক চায় পাথর মন্ত্রী চান পর্যটন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ম্যানুয়েলেও ‘ভয়’ মন্ত্রী ইমরান আহমদের। এ কারণে পাথর কোয়ারি খুলে দিতে মত নেই তার। মানবিক বিবেচনায় আগে স্বল্প পরিসরে পাথর তোলার অনুমতি দিয়েছিলেন। এখন তিনি সেটিরও পক্ষে নন। পর্যটনের পক্ষে। এ কারণে সিলেটের তিন উপজেলার কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এক শারপিন টিলা সব বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কোম্পানীগঞ্জে। অবাধে পাথর লুটপাটের ফলে শারপিন টিলা এখন বিরানভূমি।
পাথর লুটপাটে সব ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পাথরখেকো সিন্ডিকেটের লাগামহীন লুটপাটে ঝরে পড়েছে শত প্রাণ। এক সময় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে ম্যানুয়েলি পাথর উত্তোলন করা হতো। তিনটি কোয়ারিতে লাখ লাখ শ্রমিক হাত দিয়ে পাথর উত্তোলন করতো। এতে হতো না কোনো পরিবেশ বিপর্যয়। বরং পর্যটন ও পাথর ব্যবসা এক সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে চলেছে। কিন্তু ১৫ বছর আগে হঠাৎ করে বোমা মেশিনের দাপট বেড়ে যায় সিলেটের পাথর কোয়ারিতে। বোমার তাণ্ডবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সব কোয়ারি। পাথরখেকোরা মাত্র কয়েক বছরেই লুটেপুটে খেয়ে নেয় শত শত কোটি টাকার পাথর। আর বোমা মেশিনের গর্তে পাথর তুলতে গিয়ে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণ গেছে। এতে সরকার হয় কঠোর। এলাকার সংসদ সদস্য ইমরান আহমদও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কোয়ারি এলাকাকে রক্ষায় পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে কোয়ারি রক্ষা পেলেও জনপদ রক্ষা পায়নি। পাথরখেকোরা রাস্তা, ঘরবাড়ি, সরকারি স্থাপনা সব উজাড় করে দিয়েই পাথর উত্তোলন করতে থাকে। গত বছর পর্যন্ত এই লুটপাট অব্যাহত থাকে। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার কারণে সব বন্ধ করে দেয়া হয়। এখনো এই সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। পাথরকেন্দ্রিক অর্থনীতি উত্তর সিলেটে। পাথর তুললে অর্থনীতি সচল থাকে। পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেই দেখা দেয় হাহাকার। বাড়ে সামাজিক অস্থিরতা। চুরি, ডাকাতি, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যাওয়াসহ নানা ঘটনা ঘটে। এ কারণে অতীতে সামাজিক অস্থিরতা কমাতে গত কয়েক বছর কিছুটা নমনীয় ছিলেন এলাকার সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনায় ম্যানুয়েলি পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হলেও এতে কাজ হয়নি। বরং বোমা মেশিনের তাণ্ডব চালিয়ে লোকালয়ের অস্তিত্ব বিলীন করা হয়। এ কারণে ম্যানুয়েলিও পাথর উত্তোলনের সুযোগ দিতে ভয় এলাকার সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের। তিনি এবার আর ম্যানুয়েলিও পাথর উত্তোলনের সুযোগ দিতে চান না। তিনি পাথর উত্তোলনের চেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছেন পর্যটনকে। তার এই সিদ্ধান্তে কিছুটা অস্বস্তি বিরাজ করছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের পাথর কোয়ারিতে। কোয়ারিকেন্দ্রিক পাথর ব্যবসায় জড়িত কয়েক লাখ শ্রমিক। করোনায় পাথরকেন্দ্রিক অর্থনীতি তছনছ করে দিয়েছে। এলসি পাথর ব্যবসায় বার বার বিনিয়োগ করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। দফায় দফায় বন্ধ হয়ে পড়ে এলসির পাথর আমদানি। এই অবস্থায় কয়েক লাখ শ্রমিক পড়েছেন বেকায়দায়। এতো শ্রমিককে এক সঙ্গে অন্যত্র কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনা নেই। বিকল্প কাজ না পেয়ে শ্রমিকরাও হয়ে পড়েছেন অসহায়। এতে করে বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা। শ্রমিকরা এখন ম্যানুয়েলি পাথর উত্তোলন চায়। পূর্বের মতো বেলচা, চাউনি দিয়ে তারা পর্যটনকে বাঁচিয়ে পাথর উত্তোলন করতে অনুমতির অপেক্ষায়। দীর্ঘ ৮ মাস পর চার দিনের সফরে নিজ এলাকা সিলেট-৪ আসনে পরিদর্শনে আসেন মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তার এই সফরে আলোচনায় ছিল সিলেটের পাথর কোয়ারি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জনপ্রতিনিধিসহ সবাই এ ব্যাপারে কথা বলেন মন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু মন্ত্রী অনড়। তার বক্তব্য একটাই- পরিবেশ বাঁচাতে হবে। শ্রমিকদের তিনি পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায় কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন। তিনি পর্যায়ক্রমে তিন উপজেলা পরিদর্শন করেন। শুক্রবার তিনি পরিদর্শনে যান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে। সাদা পাথর এলাকাও দেখতে যান তিনি। এ খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জের পাথর শ্রমিকরা মন্ত্রীর পথে মানববন্ধন করেন। পাথর উত্তোলনের সুযোগের দাবিতে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। নেতারাও মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তার এলাকায় আর পাথরকেন্দ্রিক ব্যবসার কোনো সুযোগ নেই। এখন পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায় সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য তিনি নতুন পরিবেশ গড়ে তুলতে চান। এ কারণে আর পাথর ব্যবসায় তার মত নেই বলে জানান। এদিকে শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ম্যানুয়েলি পাথর উত্তোলনে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নেই। এ কারণে অতীতের ন্যায় শ্রমিকদের ম্যানুয়েলি পাথর উত্তোলনের সুযোগ না দিলে কোম্পানীগঞ্জসহ তিন উপজেলার লাখ লাখ শ্রমিক না খেয়ে মারা যাবে। এতে চুরি, ডাকাতি বেড়ে যাবে। এ কারণে পাথরখেকো সিন্ডিকেটদের দূরে রেখে ম্যানুয়েলি পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তারা।
মানববন্ধন: সরকারি রয়্যালিটি গ্রহণপূর্বক কোম্পানীগঞ্জে ভোলাগঞ্জ ধলাই নদীর পাথর কোয়ারি হতে পুনরায় বালুপাথর উত্তোলনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পানি নিষ্কাশন বালু-পাথর উত্তোলন ও বহনকারী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য শাখা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে ধলাই নদীর পারে শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক ভোলাগঞ্জ ধলাই নদীর পাথর কোয়ারি হতে ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে বালুপাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যু বরণ করায় প্রশাসন বালুপাথর উত্তোলন বন্ধ করার ফলে কোম্পানীগঞ্জের বালুপাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের প্রায় দুই লাখ পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। একটি দুর্ঘটনার জন্য লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা বন্ধ হওয়াও কোনো মতেই কাম্য নয়। পাথর শ্রমিকরা সরকারি রয়্যালিটি গ্রহণপূর্বক ভোলাগঞ্জ ধলাই নদীর পাথর কোয়ারি থেকে পুনরায় বালুপাথর উত্তোলনে গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জের সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদসহ ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিনের পরিচালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আব্দুল মালিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আহমদ বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুক মিয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মিয়া, অর্থ সম্পাদক ফারুক আহমদ, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান, সদস্য বাবুল মিয়া, গিয়াস উদ্দিন, সুজন মিয়া, মুকুল মিয়া, নারী নেত্রী রোকেয়া বেগম, মনোয়ারা বেগম, নুরুন্নেছা, নুরজাহান, বিনতি রানী নাথ প্রমুখ।