ধর্ষণ মামলায় মেডিক্যাল রিপোর্ট মুখ্য নয়: হাইকোর্টের রায়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ধর্ষণ মামলায় মেডিক্যাল রিপোর্ট মুখ্য নয়, ভুক্তভোগীর মৌখিক ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তার ভিত্তিতে আসামিকে সাজা প্রদান করা যেতে পারে মর্মে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। খুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইবরাহিম গাজীর সাজা বহাল রেখে বুধবার (১৪ অক্টোবর) বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রায় প্রকাশিত হয়।
আদালত তার রায়ে বলেছেন, শুধুমাত্র মেডিক্যাল রিপোর্ট না থাকার কারণে ধর্ষণের মামলা অপ্রমাণিত বলে গণ্য হবে না। ভুক্তভোগীর মৌখিক ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তার ভিত্তিতে আসামিকে সাজা প্রদান করা যেতে পারে। তাই মেডিক্যাল রিপোর্ট না থাকার কারণে যে আসামি ধর্ষণ করেনি মর্মে খালাস পেয়ে যাবে, এই অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। ভুক্তভোগী দেরিতে মামলা করলেও তা মিথ্যা নয় বলেও রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর আগে খুলনার দাকোপে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অপরাধে ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসামি মো. ইবরাহিম গাজীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ, সঙ্গে ২০ হাজার টাকা অনাদায়ে আরও ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এরপর সেই রায়ের বিরুদ্ধে আসামি হাইকোর্টে ফৌজদারি আপিল দায়ের করে। হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসি (রুপা)। আর আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমিনুল হক হেলাল। শুনানিতে আসামির আইনজীবী আদালতকে জানান, মামলার অভিযোগে ঘটনার সময় দেখানো হয়েছে ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে। কিন্তু বাদী নালিশি মামলা করেছে ঘটনার ৮দিন পর, অর্থাৎ ২০০৬ সালের ২৩ এপ্রিল। এই বিলম্বের কারণে আসামিকে মিথ্যাভাবে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্ট আসামির সাজা বহাল রেখে তার আবেদনটি খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন। আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেন, ধর্ষণ মামলায় মেডিক্যাল রিপোর্ট মুখ্য নয়, ভুক্তভোগীর মৌখিক ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তার ভিত্তিতে আসামিকে সাজা প্রদান করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, মামলায় অভিযোগ করা হয়, ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা মসজিদের একজন ইমাম। তার মেয়ে প্রায়ই স্কুলে যাওয়ার পথে আসামি ইবরাহিম মেয়েকে উত্যক্ত করতো এবং খারাপ প্রস্তাব দিতো। ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে সে পার্শ্ববর্তী মসজিদে কোরআন শরিফ পড়তে যায় এবং সেই মসজিদের ঘাটে ওজু করে। সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা আসামি ইবরাহিম ওই ছাত্রীকে পেছন থেকে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে এবং পাঁজাকোলা করে পাশের বাঁশ বাগানের নির্জন স্থানে নিয়ে যায় এবং সেখানে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পরে ওই ছাত্রী তার মাকে ঘটনা অবহিত করলে প্রথমে তৎকালীন ইউপি সদস্য মো. সৈয়দ ভূঁইয়ার কাছে বিচারে সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে সালিশের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে আসামিপক্ষ ভুক্তভোগীর পরিবারকে বারবার হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকলে তারা দাকোপ থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে আত্মীয়দের পরামর্শে ২০০৬ সালের ২৩ এপ্রিল খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে নালিশি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল দাকোপ থানাকে মামলা গ্রহণ করে অনুসন্ধান করতে এবং একই বছরের ১৭ মে ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা করতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ সঙ্গে না যাওয়ায় ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এরপর এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে আসামি ইবরাহিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।