অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারের কাছাকাছি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ঘূর্ণিঝড় ডেল্টার কয়েকদিনের তাণ্ডব শেষ হওয়ায় রোববার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের নিজ নিজ ফ্যাসিলিটিজে ফেরাতে শুরু করেছে ও তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। এছাড়া আফ্রিকান দেশ লিবিয়া তাদের সর্ববৃহৎ তেলক্ষেত্র পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এ দুটি কারণে তেলের দাম কমে ৪০ ডলারের কাছাকাছি চলে এসেছে। খবর ব্লুমবার্গ ও রয়টার্স।
ঘূর্ণিঝড়, নরওয়ের শ্রমিক ধর্মঘট আর যুক্তরাষ্ট্রে পাস হতে যাওয়া নতুন আর্থিক প্রণোদনার কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ করে বেড়ে যায়। যদিও এখন তা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নিউইয়র্কের বাজারে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম এখন ৪০ ডলারের কাছাকাছি।
গত শুক্রবার নরওয়েতে শ্রমিক ধর্মঘটের অবসান হওয়ার পর পরই ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে আসে। এরপর বাধা ছিল ঘূর্ণিঝড়। মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলে ডেল্টার আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াইশ কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রতিদিন ১৬ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন ব্যাহত হয়। সব মিলিয়ে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এ কদিনে ৭১ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল তেল ও ৬৬২ কোটি কিউবিক ফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ব্যাহত হয়। শতকরা হিসেবে তা যথাক্রমে ৯২ ও ৬২ শতাংশ। ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ায় এবার ক্রুড অপারেটর আর টাগবোট অপারেটররা কাজে নেমে পড়েছেন।
শেভরন, রয়েল ডাচ শেল পিএলসি ও বিএইচপি গ্রুপের সব কর্মী যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত উত্তর মেক্সিকো উপসাগরে কাজে নেমে পড়েছে। বিএইচপির মুখপাত্র জুডি ডেন জানান, কোম্পানিটি রোববারের মধ্যে তাদের শেনজি ও নেপচুন প্রডাকশন প্লাটফর্মে সব কর্মীকে ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া তেল সরবরাহের পাইপলাইন যত দ্রুত সক্রিয় হবে তত দ্রুতই সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে বলে জানান জুডি ডেন। সমুদ্রের মধ্যে তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন পরিচালনাকারী কোম্পানির কার্যক্রমও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্ধ ছিল।
লিবিয়ার জাতীয় তেল করপোরেশন রোববার ‘ফোর্স মেজার’ তুলে নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলের তেলক্ষেত্র থেকে উৎপাদন শুরু করতে তাদের অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে। সাহারা অঞ্চলের এ ক্ষেত্রে আগামী ১০ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন তিন লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হবে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
ফোর্স মেজার মতবাদটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি সাধারণভাবে গৃহীত নীতি। এটি চুক্তির একটি সাধারণ ধারা, যা মূলত উভয় পক্ষকে দায়বদ্ধতা বা বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেয়, যখন কোনো পক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি অস্বাভাবিক ঘটনা বা পরিস্থিতির তৈরি হয়। লিবিয়া এ আইনটি এখনকার জন্য তুলে নিয়েছে। তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক ও তাদের জোটের জন্য লিবিয়ার এ সিদ্ধান্তটি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারিতেই বর্ধিত উৎপাদনে যাবে কিনা, তা নিয়ে এখন ভাবছে ওপেক। যেহেতু দেশে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়ছে, কাজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে ওপেকের জন্য ৩০ নভেম্বর-১ ডিসেম্বরের বৈঠকটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক আইএনজি ব্যাংক এনভির কমোডিটি স্ট্র্যাটেজির প্রধান ওয়ারেন প্যাটারসন বলেন, ‘বাজারে সরবরাহ আসছে, কিন্তু চাহিদা নিয়ে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা, কেননা ইউরোপের বড় একটি অংশে কভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে।’
লিবিয়া উৎপাদনে ফিরছে বলে বাজারে ভারসাম্য ফিরেছে, যদিও সবকিছু নির্ভর করছে ভোক্তার চাহিদার ওপর। অপরিশোধিত তেলের দাম কমলেও ইরাক আশা করছে, ব্যারেলপ্রতি দাম ২০২১ সালে ৪৫ ডলারে উন্নীত হওয়ার আগ পর্যন্ত যেন ৪১ থেকে ৪২ ডলারের মধ্যেই থাকে। তেলমন্ত্রী ইহসান আবদুল জাব্বারের সাক্ষাত্কারের উদ্ধৃতি দিয়ে এ কথা জানায় রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আল-সাবাহ। উৎপাদন নিয়ে ওপেকের সঙ্গে করা চুক্তিকে সম্মান দেখানোর কথাটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরাকের এই মন্ত্রী।
২০২২ কিংবা ২০২৩ সালের আগ পর্যন্ত জ্বালানি তেলের বাজার কভিড-১৯-এর আগের অবস্থায় ফিরবে না বলে নানা পূর্বাভাস থেকে জানা যাচ্ছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ড্রিলিংয়ের কাজে পূর্ণশক্তি নিয়ে নেমে পড়ছে। বেকার নিউজের তথ্যমতে, সক্রিয় তৈলকূপ গত সপ্তাহে চারটি বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১৯৩টিতে। সব মিলিয়ে গত তিন সপ্তাহে বাড়ানো হয়েছে ১৪টি।