ধর্ষণ, নিপীড়নের প্রতিবাদে উত্তপ্ত ঢাকা : প্রতিরোধের ডাক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশব্যাপী একের পর এক ধর্ষণ, নিপীড়নের প্রতিবাদে গতকালও উত্তপ্ত ছিল ঢাকা। দিনভর জাতীয় প্রেস ক্লাব, নয়াপল্টন, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। মহাসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নতুন প্ল্যাটফরম ‘ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র জনতার মঞ্চ’। প্ল্যাকার্ড হাতে শত শত মানুষ প্রতিবাদ জানান। এসব কর্মসূচিতে যোগ দেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। ধর্ষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকবৃন্দ। তারা দাবি করেছেন, মৃত্যুদণ্ড দিলেও ধর্ষণ প্রতিরোধ হবে এর নিশ্চয়তা নেই। কারণ সরকার ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষক। ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য দেলোয়ারের মতো ধর্ষকদের আশ্রয়-প্রশয় দেয় এই সরকার। ছাত্রলীগের হামলায় নিহত পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ, বুয়েটের আবরার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকর হত্যার বিচার হয়নি। তাই অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রেখে ধর্ষণের সঠিক বিচার সম্ভব নয়। এজন্য এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত ‘ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র জনতার মঞ্চ’র মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আলোচনায় এসেছে, নোয়াখালীর ধর্ষক দেলোয়ার নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র দখল করেছিল। এ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সারা দেশে এমন দেলোয়ার বাহিনী তৈরি করেছে। এই দেলোয়ার বাহিনী মা, বোন, স্ত্রীদের ধর্ষণ করছে, বিবস্ত্র করছে। এই সরকার ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষক। দুঃশাসন, দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান ছাত্রনেতা নুর। বর্তমান সরকারের কাছে দেশ নিরাপদ না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকার ভোট চুরির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলন্ঠিত করেছে। সুতরাং সরকার যা-ই করুক না কেনো, তাদের হাতে এ দেশ আর নিরাপদ নয়। কাজেই আমরা বলবো, আপনারা যতই ছাত্রলীগ-যুবলীগ হয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করেন না কেনো, জনগণ কিন্তু আজ রাজপথে নেমে গেছে। জনগণকে আর দমন করতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমরা এখানে সরকার পতনের জন্য আসি নাই। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা নিজেরাই বিদায় নেন। বর্তমান এই জনরোষের ক্ষোভ থেকে বিস্ফোরণ ঘটার আগে আপনারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন।
মহাসমাবেশে সংহতি জানাতে গিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক, ডাকসু’র সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকারের চামচা মন্ত্রীরা বলছে ধর্ষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আন্দোলনের দরকার নেই। অথচ বৃহস্পতিবারও ১৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৪ জনই শিশু। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা ধর্ষণ করছে। ছাত্রলীগ ধর্ষণ করছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আপনার জিরো টলারেন্স কোথায়। এমসি কলেজে গাড়িসহ জোর করে হলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হলো। ধর্ষক ছয়জনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। কলেজ বন্ধ, হল বন্ধ। তবুও তারা হলে ছিল কি করে। পুলিশ গেলে গেটের ভেতরে ঢুকতে পারেনি। ভেতরে প্রবেশের অনুমতি না পেয়ে অপেক্ষায় ছিল। ছাত্রলীগ নেতাদের ধর্ষণ করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মী ধরতে কোনো অনুমতির দরকার হয় না। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, যদি মা, বোনের সম্ভ্রম রক্ষা করতে চান, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চান, মানুষের অধিকার রক্ষা করতে চান এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। শুধু ঢাকা শহর নয়, সারা দেশ কাঁপাতে হবে।
সংহতি জানাতে গিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যৌন বিকারগ্রস্ততার কারণে ধর্ষণ ঘটে। আমাদের দেশে ধর্ষণ হচ্ছে ক্ষমতার দম্ভে, ক্ষমতার বিকারগ্রস্ততা থেকে। যে ধর্ষকই গ্রেপ্তার হয়, পত্রিকায় দেখি তারাই নাকি গত নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের দায়িত্ব পালন করেছে। যে কারণে ধর্ষকদের বিচার হয় না। তখনই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে যখন দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। ধর্ষকদের বিচারের জন্য জনগণের সরকার দরকার। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের আমলেও ধর্ষণ হয়েছে। কিন্তু এ রকম হয়নি। প্রতিবাদ করতে গেলে গুণ্ডা বাহিনী হামলা করেনি। আজ সন্তানের সামনে মাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে। এই দুর্বৃত্তরা ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারে তাই সরকার তাদের প্রশয় দেয়। পাটকল বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। শ্রমিকদের বেকার করছে। শ্রমিকরা আন্দোলন করলে হামলা চালায়। এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে দাঁড়াতে হবে।
সংহতি জানাতে গিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এই সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শ্রমিকদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। যে সরকার ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নেয়। মানুষের ইজ্জত কেড়ে নেয়। সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তারা বিভিন্ন লীগের পাশাপাশি এখন ধর্ষক লীগের জন্ম দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নারীপক্ষ’র সদস্য কামরুন নাহার বলেন, মৃত্যুদণ্ড- ধর্ষণ প্রতিরোধের হাতিয়ার সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। বরং শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনের প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের মনযোগী হতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নারীর প্রতি যে নেতিবাচক মানসিকতা তার পরিবর্তন করতে হবে। মহাসমাবেশ চলাকালে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তামজিদ উদ্দিন, রুবায়েত ফেরদৌস, গণসংহতি আন্দোলনের সভাপতি জোনায়েদ সাকী।
এদিকে গতকাল বিকালে শাহবাগে পাহাড়-সমতলে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সিপিবি, গার্মেন্টস টিইউসি, বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন, হেলথ সার্ভিসেস ফোরাম, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পিগোষ্ঠীসহ আরো বেশ কয়েকটি সংগঠন, কবি, শিক্ষক, শিল্পী, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। সবার হাতেই ছিল ফেস্টুন, প্লেকার্ড। প্লে-কার্ডে ছিল ‘ ধর্ষকদের স্থান বাংলার মাঠিতে হবে না’ ‘নিশ্বাসের দায়ে চোখ করেছো অন্ধ, কান করেছো বধির, মুখ করেছো বন্ধ’ ‘ধর্ষকরা যেখানে লড়াই হবে সেখানে’ ‘গুম, খুন ধর্ষণ রুখবে এবার জনগণ’ ‘পাহাড়ে কিংবা সমতলে লড়াই হবে সমানতালে’ ‘আমার সোনার বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই’ ‘লাঠির বারি মারবি সামলাতে পারবি না’ ‘ বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’।
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ধর্ষণবিরোধী এই সমাবেশ থেকে ৯ দফা দাবি ও বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসরামরিক সব ধরনের যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে। ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএল-এর কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমকে আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সকল মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে। ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারাকে বিলোপ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যেকোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে এবং গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
এছাড়া সপ্তাহব্যাপী বেশকিছু কর্মসূচি ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১১ই অক্টোবর রোববার ধর্ষণবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হবে। ১২ই অক্টোবর ধর্ষণবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৩ই অক্টোবর সোমবার ধর্ষণবিরোধী চলচ্চিত্র উৎসব। ১৪ই অক্টোবর নারী সমাবেশ। ১৫ই অক্টোবর সারা ঢাকা শহরে ধর্ষণবিরোধী নারীদের সাইকেল র‌্যালি। এই সময় পর্যন্ত যদি দাবি না মানা হয় তবে ১৬ই অক্টোবর সকাল ৯টায় শাহবাগ থেকে নোয়াখালী বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ধর্ষণবিরোধী লংমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। মহাসমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থেকে তার সন্ত্রাসী ও প্রশাসনিক বাহিনী দিয়ে একের পর এক ধর্ষণ কাণ্ডকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। ৯ মাসে ৯৭৫টি ধর্ষণের মধ্যে ২৪২টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৫৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এমনই এক রাষ্ট্রে বসবাস করছি যেখানে নারীকে বিভিন্নভাবে ভোগ্যপণ্য হিসাবে প্রদর্শিত করা হচ্ছে। আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। তিনি বলেন, আমরা যখন এখানে আন্দোলন করছি তখন আমাদের বন্ধুরা বিচানায় কাঁতরাচ্ছে। মৌলভীবাজারে শিক্ষার্থীরা যখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করছিলো সেখানে ছাত্রলীগ নির্মমভাবে হামলা চালিয়ে আহত করেছে। তাদের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা বলছি আমাদের শরীরে যতক্ষণ একফোঁটা রক্ত থাকবে ততক্ষণ আমরা এই অন্যায় প্রতিহত করে যাবো। যতক্ষণ না পর্যন্ত ধর্ষকদের উল্লাস না থামবে ততক্ষণ আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, আজকের মিছিল ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় হচ্ছে। আমাদের দাবি মেনে না নিলে মিছিল গণভবনের দিকে যাওয়া শুরু করবে। নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি শ্যামা দত্ত বলেন, পাহাড়ে সমতলে যারা ধর্ষিত হয়েছেন তার বিচার করতে হবে। বিচারহীনতার কারণে ধর্ষণ বাড়ছে। বিচার না করে ধর্ষক বানানো হচ্ছে। এ কেমন দেশ যে দেশে বাবা তার সন্তানকে, ভাই তার বোনকে, স্বামী তার স্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, রাষ্ট্রটাই প্রতি মুহূর্তে ধর্ষিত হচ্ছে। কারণ প্রতিদিন এদেশের মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। রাষ্ট্রের অর্গানাইজড হিপোক্রেসির শিকার এদেশের মানুষ। করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে এখানে সমবেত হয়েছি। কারণ করোনার চাইতেও ভয়াবহ মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী এই মহাসমাবেশ সংহতি প্রকাশ করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আনু মুহাম্মদ, সামিনা লুৎফা, গীতিআরা নাসরিন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, কাবেরী গায়েন প্রমুখ। মহাসমাবেশে সংগীত পরিবেশন করেছে উদীচী শিল্পিগোষ্ঠী। এছাড়া পথনাটক, কবিতাও পরিবেশন করা হয়েছে।
নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররমে গণমিছিল ও সমাবেশ করেছে সম্মিলিত ইসলামি দলগুলো। গতকাল জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে এই সংক্ষিপ্ত সামবেশ হয়। এরপর একটি গণমিছিল আশেপাশের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভ সমাবেশে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না করলে দেশ রসাতলে যাবে। সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পুরোদেশ অচল করার জন্য আলেমরা সাধারণ জনতাকে নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে। সম্মিলিত ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ক ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, দেশব্যাপী গণধর্ষণের মহামারি ও পাশবিকতার মহোৎসব বন্ধ করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিন। আইন করে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন। সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত, ধর্ষক, নিপীড়ক ও খুনিদের কোনো ধর্ম নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। মাওলানা আবু তাহের জিহাদী আল কাসেমীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন আইম্মায়ে পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ইসলামি কানুন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শাইখুল হাদিস মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল হক, টেকেরহাটের পীর মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, শর্ষীণার ছোট পীর শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী ও জনসেবা আন্দোলনের আমীর মুফতি ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।