ব্যাগ থেকে নবজাতক উদ্ধার : ৯ শর্তে দত্তক দেওয়ার সুপারিশ আদালতের

0

শেখ মাসুদ হোসেন, সাতক্ষীরা॥ সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে বাজারের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতককে অবশেষে নয়টি শর্ত সাপেক্ষে দত্তক দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। নবজাতকটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য গত দুই দিনে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৯ জন লিখিতভাবে আবেদন জানান। এছাড়া অর্ধশতাধিক ব্যক্তি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে নবজাতকটিকে দত্তক নিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক রাসেল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের নয় সদস্য লিখিত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে একজন নিঃসন্তান সরকারি কর্মকর্তাকে শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে সাতক্ষীরার শিশু আদালতের কাছে লিখিতভাবে সুপারিশ করেছেন। আদালতের অনুমতি পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটিকে তার কাছে হস্তান্তর করা হবে। শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য নয়টি শতের্র মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: শিশুটিকে দত্তক নেওয়া ব্যক্তি গ্রামে বসবাস করলে ৫০ শতক ও শহরে বসবাস করলে ১০ শতক জমি ওই শিশুর নামে প্রদান করবেন, শিশুটির নামে ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকা ছয় মাসের মধ্যে এফডিআর করবেন, দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতার সম্পত্তি অংশীদার হবে শিশুটি, তাকে অনার্স-মাস্টার্স পড়াতে হবে, এরপর দ্বিতীয় কোনও শিশু দত্তক নিতে পারবেন না, নিজ সন্তানের মতো দেখভাল করতে হবে এবং সন্তানকেও পিতামাতার দেখভাল করতে হবে, উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক যেকোনও শর্ত পরবর্তী সময়ে আরোপ করা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, ২৯টি আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার জন্য শিশু আদালতের কাছে লিখিতভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি পেলে শিশুটিকে ওই সরকারি কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে তিনি আরও জানান। নয় সদস্য বিশিষ্ট ওই বোর্ডের অন্যরা হলেন, সদস্য সচিব উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুল¬াহ আল মামুন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অর্ণা চক্রবর্তী, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন্নাহার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন প্রমুখ। এলাকাবাসী জানান, প্রশাসন একটি সচ্ছল পরিবারে শিশুটিকে দত্তক দিলে সে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। তবে কারা শিশুটিকে ফেলে গেছে তা খুঁজে বের করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার সন্ধ্যায় কাকশিয়ালী রাস্তার পাশে একটি শ্মশানের কাছে ময়লার ভাগড়ে ব্যাগের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছিল শিশুটিকে। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করেন। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের হেফাজতে রাখা হয় শিশুটি। তার নাম রাখা হয় মহারাজ। বর্তমানে শিশুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুস্থ রয়েছে।