তুলা উৎপাদনে শীর্ষে ভারত রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥৭ অক্টোবর বিশ্ব তুলা দিবস। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উদ্যোগে প্রথমবারের আয়োজিত হয় দিবসটি। সেই হিসাবে চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হচ্ছে বিশ্ব তুলা দিবস। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী বিশ্বজুড়ে দিবসটির আয়োজন অনলাইনে সীমিত করে এনেছে। দেশে দেশে তুলা উৎপাদন আরো জনপ্রিয় করতে ও পণ্যটির বিপণন সহজ করে আনতে এ দিবস গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বিশ্ব তুলা দিবসের প্রাক্কালে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের প্রাক্কলন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে তুলা উৎপাদনে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখবে ভারত। অন্যদিকে পণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউএসডিএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে তুলা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচ অবস্থানে থাকতে পারে যথাক্রমে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও পাকিস্তান।
এ সময় ভারতে সব মিলিয়ে ২ কোটি ৮৫ লাখ বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড) তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। গত বছর ভারতে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন কমতে পারে ২০ লাখ বেল। এর আগে ২০১৩ সালে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৩ কোটি ১০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছিল।
নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যেও চীনে চলতি বছর ২ কোটি ৬৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম। গত বছর দেশটিতে মোট ২ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার বেল তুলা উৎপাদন হয়েছিল। করোনার বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর শেষে তুলা উৎপাদনের সম্মিলিত পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৯৫ লাখ বেলে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কম। ২০১৯ সালে দেশটিতে মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৩ হাজার বেল তুলা উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ।
ব্রাজিল ও পাকিস্তানে চলতি বছর যথাক্রমে ১ কোটি ২০ লাখ বেল ও ৬৩ লাখ বেল উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। এক বছরের ব্যবধানে ব্রাজিলে পণ্যটির উৎপাদন কমতে পারে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। পাকিস্তানে বাড়তে পারে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত বছর ব্রাজিলে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৩২ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছে। পাকিস্তানে এ সময় উৎপাদন হয়েছে ৬২ লাখ বেল তুলা।
এদিকে ইউএসডিএর পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, চলতি বছর তুলা রফতানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষ পাঁচ অবস্থানে থাকতে পারে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, গ্রিস ও বেনিন।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৬০ লাখ বেল তুলা রফতানির সম্ভাবনা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটাই হতে পারে সবচেয়ে বেশি তুলা রফতানির রেকর্ড। গত বছর দেশটি থেকে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৫০ লাখ বেল তুলা রফতানি হয়েছে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্যটির রফতানি বাড়তে পারে ১০ লাখ বেল।
চলতি বছর ব্রাজিল থেকে মোট ৯০ লাখ বেল তুলা রফতানি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। গত বছর দেশটি থেকে ৮৬ লাখ বেল তুলা রফতানি হয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাওয়া ভারত থেকে চলতি বছর শেষে তুলা রফতানির সম্মিলিত পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪৫ লাখ বেলে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে দেশটি থেকে মোট ৩০ লাখ বেল তুলা রফতানি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ।
এদিকে ইউরোপের দেশ গ্রিস ও আফ্রিকার দেশ বেনিন থেকে চলতি বছর যথাক্রমে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ও ১৩ লাখ বেল তুলা রফতানির পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। এক বছরের ব্যবধানে গ্রিস থেকে পণ্যটির রফতানি বাড়তে পারে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বেনিন থেকে রফতানি বাড়তে পারে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত বছর গ্রিস থেকে সব মিলিয়ে ১৪ লাখ বেল ও বেনিন থেকে ১২ লাখ বেল তুলা রফতানি হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর জের ধরে দেশে দেশে শ্রমিক সংকট, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনকারী এলাকাগুলোয় প্রতিকূল আবহাওয়া, ভারতে তুলা ক্ষেতে ক্ষতিকারক পতঙ্গের প্রকোপ ২০২০ সালে পণ্যটির উৎপাদন আগের তুলনায় কমিয়ে আনতে পারে। তবে চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোয় বাড়তি চাহিদা চলতি বছর দেশে দেশে তুলার রফতানিতে চাঙ্গা ভাব ধরে রাখতে ভূমিকা রাখবে।
এগ্রিমানি ও ইনডেক্স মুন্ডি অবলম্বনে