অর্থবছর শেষের আগেই রফতানির লক্ষ্যপূরণ মিয়ানমারের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে চাল রফতানি সাময়িক বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। এর জের ধরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি লক্ষ্য পূরণ নিয়েও তৈরি হয় সংশয়। মিয়ানমার সরকার চালের রফতানি লক্ষ্যও কমিয়ে আনে। তবে বাস্তবে ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই চাল রফতানির লক্ষ্য পূরণ করেছে মিয়ানমার। তাও সংশোধিত লক্ষ্য নয়, অর্থবছরের শুরুর সময়ে দেয়া চালের রফতানি লক্ষ্যপূরণ করেছে দেশটি। মিয়ানমার রাইস ফেডারেশন এ তথ্য জানিয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে চাল রফতানি খাতের এ অর্জন মিয়ানমারের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর সিনহুয়া ও এগ্রিমানি।
চাল উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় মিয়ানমারের অবস্থান সপ্তম। ১ অক্টোবর থেকে দেশটিতে নতুন অর্থবছর শুরু হয়। চলে পরবর্তী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেই হিসেবে সম্প্রতি মিয়ানমারে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছর। বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই চাল রফতানির লক্ষ্য পূরণ করেছে দেশটি।
মিয়ানমার রাইস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতে ২৫ লাখ টন চাল রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে করেনো মহামারী শুরু হলে এ লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। দেশটিতে গত ২৩ মার্চ প্রথম কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। মহামারীর সময় অভ্যন্তরীণ খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এপ্রিলজুড়ে চাল রফতানি সাময়িক বন্ধ রাখে মিয়ানমার সরকার।
টানা এক মাস রফতানি বন্ধ থাকায় ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে মিয়ানমারের রফতানিকারকরা ২৫ লাখ টন চাল রফতানির লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন না বলে ধারণা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এর জের ধরে দেশটি থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাল রফতানির লক্ষ্য এক লাখ টন কমিয়ে ২৪ লাখ টন পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
তবে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই পুরনো প্রাক্কলন অনুযায়ী ২৫ লাখ টনের বেশি চাল রফতানি করেছেন মিয়ানমারের রফতানিকারকরা। মিয়ানমার রাইস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরুর পর থেকে গত ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল (ব্রোকেন রাইসসহ) রফতানি হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হওয়ার ১৯ দিন আগেই চাল রফতানির লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের ১ অক্টোবর থেকে ১১ সেপ্টেম্বর সময়ে চাল রফতানি করে মিয়ানমারের রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ৭৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় করেছেন বলে জানিয়েছে মিয়ানমার রাইস ফেডারেশন।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্ট লুইন বলেন, মিয়ানমারের চাল রফতানি খাতে করোনা মহামারীর আঘাত লাগেনি। অভ্যন্তরীণ খাদ্য শৃঙ্খল বজায় রাখতে এপ্রিলজুড়ে চাল রফতানি বন্ধ রাখা হয়। খাদ্যপণ্যটির রফতানি লক্ষ্য কমিয়ে আনা হয়। তবে এসবের কোনো প্রয়োজন ছিল না। মহামারীর সময়ও আগের প্রাক্কলনের তুলনায় বাড়তি চাল রফতানি হয়েছে। খাদ্যপণ্যটি রফতানি করে আয়ও বেড়েছে। এপ্রিলে রফতানি সাময়িক স্থগিত করা না হলে বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে আরো বেশি চাল রফতানি হতো।
২০১৯-২০ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে ১১ সেপ্টেম্বর সময়ে মিয়ানমার থেকে চীন, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, বেলজিয়াম ছাড়াও সেনেগালসহ আফ্রিকার দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি হয়েছে। এ সময় মিয়ানমার থেকে রফতানি হওয়া ৮৪ শতাংশ চাল সমুদ্রপথে গন্তব্যে গেছে, যার পরিমাণ প্রায় ২১ লাখ টন। বাকি ১৬ শতাংশ চাল রফতানি গন্তব্যে গেছে সড়কপথে সীমান্ত পেরিয়ে।এ সময় মিয়ানমার থেকে রফতানি হওয়া ৩০ শতাংশ চালের গন্তব্য ছিল চীন। ২৮ শতাংশ গেছে আফ্রিকার দেশগুলোয়। একই সময় ২০ শতাংশ চাল ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় রফতানি করেছে মিয়ানমার।
এদিকে মিয়ানমারের চাল খাত নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে মিয়ানমার থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২২ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। চলতি বছরও দেশটি থেকে একই পরিমাণ চাল রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছিল।
তবে রফতানির পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকলেও ২০২০ সালে মিয়ানমারে চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মিয়ানমারে সব মিলিয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। তবে চলতি বছর মিয়ানমারে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৩১ লাখ টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মিয়ানমারে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন বাড়তে পারে চার লাখ টন।