যশোর সদর উপজেলা : চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে চান বিএনপির নেতাকর্মীরা

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়াতে চান যশোর বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত প্রায় দুই দশক ধরে হামলা-মামলায় জর্জরিত কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠে সরব হতে চান দলটির নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের ত্যাগী, পরীতি নেতাদের পাশাপাশি সমাবেশ ঘটানোর উদ্যোগ চলছে উদ্যমী তরুণদের। তারা যেকোন মূল্যে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চান।
আগামী ২০ অক্টোবর যশোর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচন। এখানকার নির্বাচিত চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার পদত্যাগ করে যশোর-৬ কেশবপুর আসন থেকে এমপি পদে নির্বাচন করায় চেয়ারম্যানের ওই পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর আগামী ২০ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা মহিলা লীগের সাবেক সভানেত্রী ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূরজাহান ইসলাম নীরা। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হলেন যশোর পৌরসভার সাবেক জনপ্রিয় কমিশনার বর্তমান সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূর-উন-নবী। বিএনপির কেন্দ্র থেকে তাকে (নূর-উন-নবী) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে জেলা বিএনপিকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিমত, নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে। বিএনপি নেতা নূর-উন-নবী একজন পরীক্ষিত নেতা। বিএনপির সূচনা লগ্ন থেকেই তিনি এ দলের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। বিশেষ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলামের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে নূর-উন-নবী এখনো মাঠের নেতাকর্মীদের হৃদয়ে জায়গা করে আছেন। তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। যে কারণে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সাথে তার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে নেতাকর্মীরা কোনো দ্বিধা ছাড়াই মাঠে সক্রিয় থাকবেন বলে তারা জানান। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা সরব হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে তাদের পছন্দের একজন নেতাকে দলের মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীরা ব্যাপক আশাবাদী। তারা এ নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে জেতার জন্যই অংশ নিয়েছি। যদিও নির্বাচন নিয়ে অতীতের রেকর্ড ভালো নয়। মানুষ কোনো নির্বাচনে তার ভোট দিতে পারেননি। তারপরও সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার আশ্বস্ত করেছেন দিনের ভোট আর রাতে হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে কারণে আমরা মনে করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সামনের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ সাধারণ ভোটাররা পরিবর্তন চায়। তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়।’ একই কথা বলেন তৃণমূলের নেতৃবৃন্দও। সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম বলেন, নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে যাকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে তিনি একজন পরীক্ষিত নেতা। তিনি বর্তমানে এই উপজেলা বিএনপির সভাপতি। এর আগে দীর্ঘদিন তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যে কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এসব কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা এখন মুখিয়ে আছেন নির্বাচনের দিনের জন্য। তারা যেকোনো মূল্যে নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়ে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চান। বিএনপি নেতা কাজী আজম বলেন, এ সরকারের কাছ থেকে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা বিএনপি কখনও করে না। তারপরও আমরা মনে করি সরকার সামান্য একটি উপজেলা নির্বাচনে অতীতের নোংরামি থেকে বিরত থাকবে। নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেকোনো মূল্যে তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করে ছাড়বেন। এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, এ সরকারের আমলে কোথাও কোনো নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারপরও বিএনপি গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ কী হবে তা আমরা এখনো স্পষ্ট নয়। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নির্বাচনের যে চিত্র দেখেছি তাতে মনে হয় না এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে। তারপরও এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা যে জনগণের পাশে যেতে পারবো সেটিই আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র আমাদের নেতাকর্মীদের মাঝে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছি তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমরাই বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ নির্বাচনকে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখছেন।