যশোর ইনস্টিটিউট : জমির পরিমাণ আরও ২ বিঘা বেড়েছে ৯৯ বছরের জন্যে লিজ নেয়া ১৯৬০ সালে

0

তহীদ মনি ॥ যশোর ইনস্টিটিউটের সম্পদ ও জমি সংক্রান্ত কিছু মূল্যবান কাগজ ও দলিল উদ্ধার হয়েছে। সে কাগজপত্র অনুযায়ী জমির পরিমাণ ২ বিঘারও বেশি বেড়ে গেছে।  ইনস্টিটিউটের নামে ১৯৬০ সাল থেকে ৯৯ বছরের জন্যে এ জমির ইজারা রয়েছে। জমি উদ্ধারে গঠিত হয়েছে পাঁচ সদস্যের সম্পদ রক্ষা ও জমি উদ্ধার উপ-কমিটি।
দৈনিক লোকসমাজে গত ১০ সেপ্টেম্বর একটি তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেন বর্তমান পরিচালনা পরিষদ। এ প্রেক্ষিতে পরিষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক এবং সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিতভাবে সম্পদ রক্ষা ও জমি উদ্ধারের বিষয়ে ঐক্যমতে পোষণ করেন। পরবর্তীতে ইনস্টিটিউটে নির্ধারিত কমিটি গত রোববার রাতে দীর্ঘ সভায় মিলিত হন। সভায় বসার আগে তারা পুরাতন সমস্ত ফাইলপত্র, সম্পত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এ সময় বেশ কিছু মূল্যবান কাগজপত্র উদ্ধার হয়। সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং যশোর ইনস্টিটিউটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদুর রহমান টিটোর সাথে কথা বলে দিক নির্দেশনা নেন। রোববার রাতের সভায় সম্পদ রক্ষায় অ্যাড. আবু সালেহ রানাকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়।
উপ-কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন টুলু, অ্যাড. শাহরিয়ার বাবু, অ্যাড. সোহেল শামীম ও অ্যাড. মোকাররম হোসেন। উপ-কমিটিকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চিঠি এবং সংশ্লিষ্ট দলিলাদি বুঝিয়ে দেয়া হবে। জানা যায়, সভায় নতুন একটি তথ্য ও সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় জানানো হয়, ইনস্টিটিউটের জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ২৪ একর নয়। তাদের কাছে রক্ষিত কাগজপত্র অনুযায়ী জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ৯৮ একর। অর্থাৎ অতিরিক্ত জমি দশমিক ৭৪ একর বা দুই বিঘার বেশি। বিগত কমিটি এ বিষয় জানতো না তাই এই জমি কোন দিকে বা কার নামে কীভাবে আছে তা বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে একটি সূত্র জানায়, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে শেখ রবিউল আলম স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদপত্রে ৩.৯৮ একর জমির কথা বলা হয়। এ সংক্রান্ত কাগজ ও দলিল পাওয়া গেলে যশোর জেলা পরিষদের সাথে জমি নিয়ে যে বিরোধ চলছে তা যেমন মিটতে পারে তেমনি নামে বেনামে কে বা কারা সম্পত্তি ভোগ করছে তা জানা যাবে। আরও জানা যায়, ইনস্টিটিউটের জমির জন্যে ১৯৫৭ সালে তৎকালীন ডেপুটি কালেক্টরেট বরাবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি আবেদন করেন। সে প্রেক্ষিতে ৯৯ বছরের জন্যে ওই জমি ইনস্টিটিউটকে লিজ বা বরাদ্দ দেয়া হয়। যা ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকরি হবার কথা। বরাদ্দ পাওয়া জমি ৩০ বছর পর পর নবায়নের জন্যে আবেদনের কথাও ছিল সে বরাদ্দপত্রের শর্তে। এদিকে, ২০০৩ সালে ইনস্টিটিউটের ৩ দশমিক ২৪ একর জমি খাস খতিয়ানে যাওয়ার পর বিভিন্ন কমিটির পক্ষ থেকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বরাবর মৌখিক ও লিখিত আবেদন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি বলে পরিচালনা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা জানান। কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে ২০১৪ সালের পরিচালনা পরিষদের শীর্ষ নেতার একগুঁয়েমি ও অদক্ষতার কারণে তৎকালীন জেলা প্রশাসনের সাথে তার বৈরি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ফলে ওই জমি খান থেকে প্রতিষ্ঠানের নামে ফেরত না আসার অন্যতম কারণ। বিষয়টি এমন পর্যায়ে গেছে যে, সম্প্রতি পৌরভূমি অফিসে ইনস্টিটিউটের পক্ষে খাজনা দিতে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা খাজনা না নিয়ে ফেরত দিয়েছেন। খাজনা দিতে যাওয়া ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের রশিদ অনুযায়ী বাংলা ১৪২৪ সন পর্যন্ত পরিশোধ রয়েছে। তারপরও রহস্যজনক কারণে এবার খাজনা ভূমি অফিস গ্রহণ করেনি। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কমিটি গঠিত হয়েছে। আইনজীবির সাথে কথা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাওয়া কাগজপত্র ও দলিলাদি আইনজীবির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি জমি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও সত্য বলে নিশ্চিত করেছেন।