মেয়াদ উত্তীর্ণের ৫ বছরেও মোংলা পৌরসভার নির্বাচন হয়নি

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ সর্বশেষ বাগেরহাট জেলার মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি। সে নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন মো. জুলফিকার আলী। এ সময় মেয়রের পাশাপাশি পৌরসভার অধিকাংশ কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়েছিলেন মেয়রের ঘনিষ্ঠ ঘরোনার লোক। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর মেয়াদে মেয়র হিসেবে জুলফিকার আলী ও কাউন্সিলর পদে তার সমর্থক লোকই পৌরসভার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখনো পর্যন্ত এ পৌরসভায় আর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সীমারা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর বিশেষ একটি প্রভাবশালী মহলের নেপথ্যের ছত্রছায়ায় নির্বাচন ছাড়াই মেয়াদ শেষের আরো অতিরিক্ত ৫ বছর ক্ষমতা ভোগ দখল করে চলেছেন। এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে চলছে নানা ক্ষোভ, হতাশা আর গুঞ্জন। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা অভিযোগ উঠেছে। এদিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ এ পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করে অবিলম্বে প্রশাসক নিয়োগের দাবিসহ তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ ও মোংলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনার জন্যে বর্তমান মেয়রকে দুষছেন অনেকে। ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতেই তার অনুসারীদের দিয়েই উচ্চ আদালতে নির্বাচনের আগে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন বলে অভিযোগ বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে। তবে বর্তমান মেয়র এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি নিজেই এ মামলার বিবাদী। তিনিও দ্রুত এ বিষয়ের নিষ্পত্তি চান।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি মোংলা বন্দর পৌরসভার নির্বাচনে মো. জুলফিকার আলী ৭ হাজার ৯ শ ৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শেখ আব্দুস সালাম। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বর্তমান পৌর মেয়রের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় ছিল। ওই বছর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ওই বছর ১ ডিসেম্বর আদালতের আদেশে মোংলা বন্দর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করে। তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপ-সচিব মহসিনুল হকের স্বারিত চিঠিতে বলা হয়, হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেেিত মোংলা বন্দর পৌরসভার নির্বাচনের েেত্র ঘোষিত তফসিল ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মামলা ও প্রশাসনিক জটিলতায় মোংলা বন্দর পৌরসভার নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি। মোংলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারী কমান্ডার ইস্রাফিল ইজারদার গত ১ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানান, মেয়র জুলফিকার আলী তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্যে নিজ সমর্থকদের দিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করে নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, চলতি বছর আবারো মামলা করে নির্বাচন বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছেন। সে জন্য দ্রুত মোংলা বন্দর পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। এছাড়া তিনি মেয়রের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করার জন্যে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সুজনের (সুশাসনের জন্যে নাগরিক) মোংলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মোংলা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নূর আলম শেখ বলেন, ১০ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়া সত্যিই খুব হতাশাব্যঞ্জক। এটা কোন গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী হতে পারে না। এভাবে মেকানিজম করে ক্ষমতায় থাকা জনগনের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছ্ইু নয়। তাছাড়া এ কয়েক বছরে কয়েক হাজার নতুন এবং তরুণ ভোটার হয়েছেন। তারাও ভোট দিতে না পারায় চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ। নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। এ নিয়ে কথা হয় পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান, মোংলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইজারাদার জালাল আহম্মেদ বুলবুল, মোংলা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. সরোয়ার হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নারী নেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শিউলী ইয়াসমিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এনজিওকর্মী মুক্তা বেগম, মোংলার আরাজি মাকরঢোন এলাকার নতুন ভোটার ফেন্ড্রশ স্পোর্টিং কাবের অধিনায়ক শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে। তারা সবাই প্রায় অভিন্ন কণ্ঠে জানান, বর্তমান মেয়র তার নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে মামলা জটিলতার অজুহাত দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে এ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে। তারা এসব জটিলতা নিরসন করে অবিলম্বে মোংলা পৌরসভায় নতুন নির্বাচনের দাবি জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা বন্দর পৌরসভার মেয়র মো. জুলফিকার আলী বলেন, আমি গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করি। আমিও চাই দ্রুত এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ঘোষণা করুক। এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজির আহম্মেদ জানান, সীমানা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ। সীমানা নির্ধারণ শেষে গেজেট আকারে তা প্রকাশিত হলে তখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফসিল ঘোষণা করতে পারবে। সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো করেনি। তাই মোংলা বন্দর পৌরসভার নির্বাচন কবে দেয়া সম্ভব হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।