চৌগাছায় কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ

0

এম. এ. রহিম চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় সার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করায় কৃষকরা আর্থিকভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছেন। এদিকে উপজেলায় সারের কোন সংকট নেই, বেশি মূল্যে সার বিক্রির সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগও নেই বললেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন। ১২ আগস্ট সারের বেশি দাম ও কৃত্রিম সার সংকট ঠেকাতে সারের বাজার মনিটরিং করার জন্য জোর তাগিদ দিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে একটি পত্র দেয়া হয়। সে কারণে কৃষি কর্মকর্তারা বাজারে মনিটরিং জোরদার করেছেন। কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে টিএসপি সার ২২ টাকা নির্ধারিত হলেও ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজিদরে কিনতে হচ্ছে। ডিএপি ১৬ টাকার স্থলে ২০ থেকে ২২ টাকা, এমওপি ১৫ টাকার স্থলে ১৮ থেকে ২০ টাকা, ইউরিয়া ১৬ টাকার পরিবর্তে ১৮ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার চৌগাছা, হাকিমপুর, পাশাপোল, নারায়ণপুর, সলুয়া, সিংহঝুলি, পুড়াপাড়া, মাশিলা, খড়িঞ্চা, চাঁদপাড়া ও ফাঁসতলাসহ বিভিন্ন বাজারে কৃষকদের সাথে কথা বলে জনা গেছে, তাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। স্থানীয় সার ডিলার, সাব-ডিলার ও খুচরা সার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, গেল সপ্তাহে চাঁদপাড়া বাজার থেকে মাছের ঘেরের জন্য ১ বস্তা টিএসপি সার কিনেছি। দোকান মালিক বলেন, নগদে নিলে ১৫শ টাকা আর বাকিতে নিলে ১৫শ ৪০ টাকা বস্তা। বাকিতে নেয়ায় আমি বাধ্য হয়ে ১৫ শ ৪০ টাকায় নিয়েছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিসিআইসি ডিলারের ভাই ও খুচরা সার ব্যবসায়ী বলেন, এ বছর সারে বেশ লাভ হচ্ছে। খুচরা সার ব্যবসায়ীরা টিএসপি ২৭-২৮ টাকা, ডিএপি ১৮-২০, ইউরিয়া ১৮-২০ এমওপি ১৮-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তিনি আরো বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে সারের বরাদ্দ নেই। তাই বাইরের সার কিনে এনে বিক্রি করায় দাম বেশি। জুলাই মাসে দেড়শ মেট্রিকটন টিএসপি এবং চারশ মেট্রিকটন ডিএপি চৌগাছার জন্য বরাদ্দ। তিনি বলেন, ডিলাররা চট্টগ্রাম থেকে সার তুলে সেখানেই বস্তাপ্রতি ১২০/১৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন।
সার সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের বিসিআইসি ডিলার মেসার্স দিপু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহাবুদ্দিন চুন্নু বড় মিয়া প্রথমে বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে সারের বরাদ্দ নেই। পরে তিনি বলেন, অল্প কিছু সার বরাদ্দ আছে। যা আনতে খরচ অনেক বেশি হবে তাই উত্তোলন করা হয়নি। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, সারের বরাদ্দ না থাকায় সারের সংকট হয়েছে। পরে জুলাই ও আগস্ট মাসের সার বরাদ্দের তালিকা দেখালে তিনি বলেন, খরচ বেশি হওয়ায় ডিলাররা সার আনেননি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই মাসে এ উপজেলায় সারের চাহিদা ছিল ইউরিয়া ১৪ শ মেট্রিকটন, টিএসপি ২২৫, ডিএপি ৬শ, এমওপি ১১শ, জিপসাম ৬শ ও বোরন ৮ মেট্রিকটন। এর বিপরীতে ইউরিয়া বরাদ্দ ছিল ৯৬০ মেট্রিকটন। ভর্তুকির আওতাভুক্ত হিসেবে টিএসপি বিসিআইসি থেকে ৫৯ এবং বিএডিসি থেকে ৯১ মোট ১৫০ মেট্রিকটন, বিএডিসি থেকে ডিএপি ৪শ মেট্রিকটন এবং এমওপি ৩০০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিকে যে মাসের সার বরাদ্দ হবে ওই মাসসহ দুই মাসের মধ্যে সেই সার ডিলারদের নির্ধারিত গুদামে এনে উপজেলা কৃষি অফিসে অ্যারাইভাল রিপোর্ট জমা দিতে হবে। পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিজে গিয়ে সার বুঝে নিয়ে বিক্রির অনুমতি দেবেন। বরাদ্দের দুইমাস ৭ দিন পার হলেও বিএডিসির বরাদ্দ ৯১ মেট্রিকটন টিএসপির বিপরীতে ৩৭ জন ডিলারের মধ্যে ১৩ জন ৩৯.৪৫ মেট্রিকটনের অ্যারাইভাল জমা দিয়েছেন। বিসিআইসির বরাদ্দ ৫৯ মেট্রিকটন টিএসপির বিপরীতে ১৬ ডিলারের ১৪ জন ৫৫.৩৫ মেট্রিকটনের অ্যারাইভাল জমা দিয়েছেন। তবে বিসিআইসি ডিলাররা এসব আগমনী বার্তা জমা দিলেও সার এলাকায় আনেননি বলে খুচরা বিক্রেতা ও কৃষকদের অভিযোগ। খুচরা সার ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিলাররা সার না এনে কাগজ বিক্রি করে দেন। সার না এনেও ডিলাররা কিভাবে অ্যারাইভাল জমা দেন, আবার কেউ না দিয়েও পার পেয়ে যান এমন মন্তর‌্য করেন তারা। অন্যদিকে বিএডিসি থেকে বরাদ্দ ৪শ মেট্রিকটন ডিএপি সারের বিপরীতে উপজেলার ৩৭ জন ডিলারের মধ্যে ২৩ জন ডিলার মোট ২৯৩.৫৫ মেট্রিকটন ডিএপি সারের অ্যারাইভাল (আগমনী বার্তা) জমা দিয়েছেন। এতেই প্রমানিত হয় যে, বরাদ্দের সার সব উপজেলায় আসেনি। অথচ সার সংকট দেখিয়ে বাইরে থেকে সার আনতে হয় এ অজুহাতে কৃষকের কাছ থেকে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে।