সাবরিনার দ্বৈত ভোটার হতে ‘ভিআইপি’ জড়িত থাকলে আইনি ব্যবস্থা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারপারসন ডা. সাবরিনা চৌধুরীর দ্বৈত ভোটার হওয়ার েেত্র কোনও ভিআইপি জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর । বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের তফসিল ঘোষণাকালে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অভিযোগ উঠেছে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের তদ্বিরে গুলশানের ঠিকানা ব্যবহার করে ডা. সাবরিনা দ্বিতীয়বার ভোটার হন এবং দ্বিতীয়বার জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন। সাবরিনাকে ভোটার করার জন্য ড. মিজান নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ে সরাসরি গিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য ড. মিজান বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এর আগে ডা. সাবরিনা মোহাম্মদপুর থানার অন্তর্গত এলাকায় প্রথম ভোটার হয়েছিলেন। দুটি জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের, বাবা ও মায়ের নাম ভিন্ন দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বয়স ও ঠিকানাও পরিবর্তন করেন।
সাবরিনার দ্বৈত ভোটার হওয়ার তথ্য প্রথমে দুদকের কাছে এলে তারা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানতে চান। পরে ইসি তদন্ত করে দুটি এনআইডির বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে তার এনআইডি দুটি ব্লক করার পাশাপাশি গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইসি। দ্বৈত ভোটার হওয়ার বিষয়ে ইসি তদন্ত শুরু করেছে। এজন্য ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা ছাড়াও বুয়েট এবং কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৬ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।এনআইডি সার্ভারের সিকিউরিটি ফিচার অনুযায়ী, দ্বিতীয় ভোটার হতে আসলেই আঙুলের ছাপে ধরা পড়ে যায়। সেেেত্র একই ব্যক্তির দুই বার ভোটার হওয়া প্রায় অসম্ভব। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘একজন নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পর তথ্য ভাণ্ডারে তার তথ্যগুলো সংরণ করা হয়। ওই তথ্য ভাণ্ডারটি নির্ভুল। প্রায় শতভাগ (৯৯.৯৯) সঠিক। ’
সম্প্রতি এনআইডি জালিয়াতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় আসছে। এেেত্র ভিআইপিরা এনআইডি’র বিষয়ে তদবির করছেন, ইসি তাদের এ বিষয়ে জানতে চাইবে কিনা প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, ‘ভিআইপিরা তো তদবির করবেন। ভিআইপিরা জেনে, না জেনে তদবির করেন। অনেক সময় ভিআইপিদের কাছে অনেকে কার্ড চান। কিন্তু কার্ডটা যে উনি নিয়ে কোথায় লাগাবেন সেটা তো ওই ভিআইপি জানেন না। এজন্য যারা সচেতন, তারা কার্ড দেওয়ার বিষয়ে সর্তক থাকেন। যে কেউ কার্ড চাইলে দেন না। যদি কেউ অন্যায় চাপ প্রয়োগ করে তদবির করেন, বা যেটা করা যাবে না ওটার বিষয়ে চাপ দিয়ে বলেন, না এটা দিতে হবে। তবে সেটা অন্যায়। এেেত্র জাতীয় পরিচয়পত্র আইন অনুযায়ী উনিও একজন আসামি হবেন। তিনি যদি প্রভাব খাটিয়ে অন্যায় করেন। আর যদি দেখা যায়, উনি প্রভাব খাটান নাই, উনার রেফারেন্সে এসেছেন। এেেত্র তদন্তে বের হবে উনি প্রভাব খাটিয়েছেন কি না। আইন সবার েেত্র সমান। তিনি প্রভাবশালী হোক আর না হোক।’
সাবরিনার এনআইডি’র বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান রেফারেন্স করেছিলেন, সেই বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘একটা কমিটি করে তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে আমরা বুঝতে পারবো।’ সচিব বলেন, ‘একটি গণমাধ্যমের নিউজে দেখলাম যে, সাবরিনার আবেদনের সঙ্গে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের একটি কার্ড পাওয়া গেছে। আসলে কার্ড কি উনার কাছে চেয়েছিল বলে দিয়েছেন না কি? তদন্ত না হলে তো বিষয়টা বলা যাচ্ছে না।’ উনার প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আইন তো সবার জন্য সমান। ’ বিভিন্ন জালিয়াতি হচ্ছে, এজন্য ইসির কোনও দুর্বলতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না ব্যর্থ নয়। ব্যর্থ বলা যায় না। আপনাদের বুঝতে হবে সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের সঙ্গে মেলাতে হয়। সাবরিনার দ্বিতীয় ভোটার হওয়ার সময় মেশিন দেখিয়ে ছিল ‘নো ম্যাচ’। প্রথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাবরিনা যখন আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছেন। তখন ‘নো ম্যাচ’ এসেছিল। নো ম্যাচ মানে হচ্ছে এর কোনও ডুবলিকেশন নেই। আমরা যে তদন্ত কমিটি করেছি। তাতে বাইরের দুই জন সদস্য রাখা হয়েছে। যাতে গোঁজামিল দিয়ে রিপোর্ট দেওয়া না হয়।’ ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০’ অনুযায়ী মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং একাধিকবার ভোটার হওয়া— এ দুটি অপরাধের জন্য এক বছর করে কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একই শাস্তি আওতায় পড়বেন অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাও।