মহামারীতেও ভারতের ইস্পাত রফতানিতে উল্লম্ফন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা সংক্রমণ রোধে টানা লকডাউনের জের ধরে চরম চাপের মুখে পড়েছে ভারতের অর্থনীতি। সামগ্রিক অর্থনীতিতে চাপ বাড়িয়ে দেশটির উৎপাদন খাত শ্লথ হয়ে এসেছে। এ ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) ভারতের কারখানাগুলোয় পরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন কমে এসেছে। কমেছে শিল্প ধাতুটির অভ্যন্তরীণ ব্যবহারও। তবে উৎপাদন ও ব্যবহার কমে এলেও একই সময়ে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত রফতানিতে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় গত এপ্রিল-জুলাই সময়ে ভারত থেকে শিল্প ধাতুটির রফতানি বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। ইন্ডিয়ান স্টিল এক্সপোর্ট জয়েন্ট প্লান্ট কমিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর মেটাল বুলেটিন ও স্টিল গুরু।
ভারতে প্রতি বছরের ১ এপ্রিল নতুন অর্থবছর শুরু হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৪৬ লাখ ৪১ হাজার টন পরিশোধিত ইস্পাত রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটি থেকে শিল্প ধাতুটির রফতানি বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এপ্রিল-জুলাই সময়ে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে মোট ১৯ লাখ ৩৩ হাজার টন ইস্পাত রফতানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে ইস্পাত রফতানি বেড়েছে ২৭ লাখ টনের বেশি।
তবে রফতানি খাতে চরম প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভারতে ইস্পাতের উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে শিল্প ধাতুটির ব্যবহার। এ সময় ভারতের কারখানাগুলোয় পরিশোধিত ইস্পাতের সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার টনে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভারতের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভারতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে ১ কোটি ৪০ লাখ টনের বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল-জুলাই সময়ে ভারতে পরিশোধিত ইস্পাতের ব্যবহার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার টনে নেমে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে দেশটিতে মোট ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৪৬ হাজার টন ইস্পাত ব্যবহার হয়েছিল। গত এপ্রিল-জুলাই সময়ে ভারতীয় আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে ১৫ লাখ ৬ হাজার টন ইস্পাত আমদানি করেছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভারতে মোট ২৫ লাখ ৯৭ হাজার টন পরিশোধিত ইস্পাত আমদানি হয়েছিল।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভারত থেকে রফতানি হওয়া পরিশোধিত ইস্পাতের বড় ক্রেতা ছিল ভিয়েতনাম ও চীন। এ সময় ভিয়েতনাম ভারত থেকে ১৪ লাখ টন ইস্পাত আমদান করেছে। চীন আমদানি করেছে ১৩ লাখ টন ইস্পাত। লকডাউন উঠে গিয়ে এপ্রিলের পর চীনা অর্থনীতিতে গতি ফিরতে শুরু করেছিল। ওই সময় ভিয়েতনামও করোনা মুক্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। ফলে দেশ দুটির আমদানি-রফতকানি কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক। এর জের ধরে ভারত করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালিয়ে গেলেও তুলনামূলক কম দামে শিল্প ধাতুটির রফতানি অব্যাহত রেখেছিল। মূলত এ কারণে উৎপাদন খাতে মন্দা ভাব দেখা গেলেও অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভারত থেকে ইস্পাত রফতানিতে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে।
ইনভেস্টমেন্ট ইনফরমেশন অ্যান্ড ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের (আইসিআরএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জয়ন্ত রায় বলেন, বছরের শুরুর দিকের তুলনায় এপ্রিল-জুলাই সময়ে ভারতে আকরিক লোহার দাম এক-তৃতীয়াংশ কম ছিল। ইস্পাত তৈরির অন্যান্য কাঁচামালের দামও ছিল নাগালের মধ্যে। ফলে ওই সময়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় সস্তায় ইস্পাত রফতানি করতে পেরেছে ভারত। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ইস্পাত রফতানিতে উল্লম্ফনের পেছনে এটাও বড় একটি কারণ।