বেনাপোল স্থলবন্দরে শুল্ক ফাঁকি ও অব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আদায়ে ধস

0

নাভারণ (যশোর) সংবাদদাতা ॥ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রম। শুল্ক ফাঁকি ও বন্দর থেকে পণ্য চুরি, মিথ্যা ঘোষনায় পণ্য আমদানি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আটক হচ্ছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্য। ইতোমধ্যে ভায়াগ্রাসহ একাধিক আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আটক করেছেন কাস্টমস শুল্ক ও গোয়েন্দারা সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে, বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দরের কতিপয় কর্মকর্তার প্রত্য ও পরো সহযোগিতায় বন্দর থেকে শুল্ক ফাঁকি ও পণ্য চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। খোদ বেনাপোল স্থলবন্দরের সিবিএ নেতাদের নামে রয়েছে বন্দর থেকে পণ্য চুরির মামলা। এ কারণে গত ৩ অর্থ বছরে রাজস্ব আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেঁধে দেওয়া ল্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বেনাপোল কাস্টমস হাউজ। রাজস্ব আদায়ে মারাত্মক ধস নেমেছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ বন্দরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ল্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা রাজস্ব কম আয় হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১৭৬ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১ হাজর ৩৪৬ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে রাজস্ব আয়ের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। ব্যবসায়ী বলছেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও অনিয়ম রুখতে পারলে আবারো ব্যবসায়ীরা এ বন্দরে ফিরবেন। তখন গতি ফিরবে রাজস্ব আয়েও। তবে বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন বন্দর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।
জানা যায়, দেশের চলমান ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং বেশি রাজস্ব আয় হয় বেনাপোল থেকে। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ব্যবসায়ীদের এ পথে আমদানি, রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। প্রায় প্রতি বছর রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ফলে তিপূরণ না পেয়ে পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে বেড়েছে পণ্য পাচার। পণ্য পাচার প্রতিরোধে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু আজও পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে। কিন্তু এ বন্দর থেকে এত টাকা সরকারের আয় হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। বার বার বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে বন্দর কর্তৃপকে বলা হলেও কাঙ্খিত উন্নয়ন আজও হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরে চলে যাওয়ায় রাজস্ব আয় কমেছে। আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে একদিকে শুল্ক ফাঁকিতে সরকারের রাজস্ব কমছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া সিসি ক্যামেরা, নতুন জায়গা অধিগ্রহণ, পণ্যগার নির্মাণসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে অনিয়ম বন্ধসহ বাণিজ্যে গতি ফিরবে বলে তিনি জানান।