করোনা-পরবর্তী বিশ্বে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়বে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদায় চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে। তবে চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা কমিয়ে এনেছে। করোনাকালের এ মন্দা ভাবকে সাময়িক মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এখন কমলেও করোনা-পরবর্তী বিশ্বে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়তির দিকে থাকবে। এর পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে জ্বালানি পণ্যটির তুলনামূলক স্বল্প দাম এবং দেশে দেশে পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে মানুষের কঠোর অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় নীতি। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
ইন্টারন্যাশনাল গ্যাস ইউনিয়ন (আইজিইউ), গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গএনইএফ (বিএনইএফ) ও ইতালির গ্যাস অবকাঠামো নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সানামের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে গ্লোবাল গ্যাস রিপোর্ট ২০২০। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা ২০১৮ সালের তুলনায় ২ শতাংশ বেড়েছিল। তবে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় এ প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে শুরু করেছে ২০২০ সালের শুরু থেকেই। চীন ছাড়িয়ে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশে দেশে লকডাউন শুরু হয়। স্থবির হয়ে আসে উৎপাদন ও আমদানি-রফতানি। বন্ধ হয়ে যায় পরিবহন খাত। গতি হারায় সামগ্রিক বৈশ্বিক অর্থনীতি। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে কমতে শুরু করে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা।
করোনা মহামারীর জের ধরে চলতি বছর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ কমে আসতে পারে বলে গ্লোবাল গ্যাস রিপোর্ট ২০২০-এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সিও (আইইএ) জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা নিয়ে একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এটাই হবে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদায় সবচেয়ে বড় পতন। এর আগে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় জ্বালানি পণ্যটির চাহিদায় বড় পতন দেখা দিয়েছিল।
তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদায় এ পতন সাময়িক এমটাই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের গ্লোবাল গ্যাস রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে পতন দেখা দিলেও আগামী বছর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা ফের চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। ২০২২ সাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের অবস্থানে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্লোবাল গ্যাস রিপোর্ট ২০২০-এ বলা হয়েছে, মূলত দুটো কারণে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা দ্রুত প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে পারে। প্রথমত, করোনাকালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। ফলে ক্রেতারা সস্তায় পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে পারছেন। এ পরিস্থিতি ক্রেতাদের মধ্যে জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহ তৈরি করবে।
দ্বিতীয়ত, করোনা মহামারীর আগে থেকেই দেশে দেশে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বাড়তির দিকে ছিল। অনেক দেশ পরিবেশ রক্ষার জন্য কার্বনের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। করোনাকালে এ সচেতনতা আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে মহামারী-পরবর্তী বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। অনেক দেশ আরো কঠোর নীতি প্রণয়ন করবে। বিশ্বজুড়ে বাড়বে পরিবেশবান্ধব ও তুলনামূলক সস্তা জ্বালানির চাহিদা। এর জের ধরে করোনা মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা দ্রুত প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে পারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খাত। ২০২১ সাল নাগাদ এলএনজির বৈশ্বিক আমদানি বাণিজ্য ২০১৯ সালের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনইএফের গ্লোবাল হেড অব কমোডিটিজ আশিস শেঠি বলেন, করোনা মহামারী বৈশ্বিক জ্বালানি খাতকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনামূলক কম দাম করোনা-পরবর্তী বিশ্বে এ খাতকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। অর্থনীতির গতি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ থেকে চীন সবখানেই কয়লার ও জ্বালানি তেলের পরিবর্তে তুলনামূলক সস্তা ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বাড়বে প্রাকৃতিক গ্যাসের।