‘বিচারপতি তোমার বিচার…’

0
ড. আবদুল লতিফ মাসুম
‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা/আজ জেগেছে এই জনতা/তোমার গুলির, তোমার ফাঁসির/তোমার কারাগারের পেষণ/শুধবে তারা ওজনে তা/এই জনতা জনতা।’ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এই গানটি প্রচারিত হয়েছে বারবার। গানটি অন্যায় আদেশ, অন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে আমাদের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে। সলীল চৌধুরীর কথা ও সুরে গানটির মর্মার্থ এখনো জাগরূক। আজো অন্যায়, অনাচার ও অত্যাচারের বিপক্ষে গানটি ঝঙ্কার তোলে। গানটি হিতকর, নীতিবোধক। কবিতায় বা গানের বাণীতেই বিচারের আবেদন-নিবেদন সীমিত। ব্যবহারিকভাবে কি এর প্রয়োগ ঘটে? বিপ্লব বা আন্দোলনের সমাপ্তিতে জনগণ অন্যায়কারীর বিচার চায়। হয়তো তার পরিসমাপ্তি ঘটে কোনো নৃশংসতায়। একে বিচার না বলে ক্ষোভের প্রকাশ বা প্রতিহিংসার অবসান বলা যায়। বাস্তবে বিচারপতিদের বিচারের সম্মুখীন হতে হয় কদাচিৎ। ইতিহাসে এর উদাহরণ খুব বেশি নেই। বাংলাদেশে ১৩ আগস্ট এক বিচারপতির বিচার শুরু হয়েছে। ১৮ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২৫ আগস্ট শুনানি আবার শুরু হবে। এই মামলা এবং মামলার আসামি সাধারণ কেউ নন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। বাংলাদেশের ইতিহাসের একেকটা বাঁকে বিরল ঘটনা ঘটে। এটিও তার একটি। অথচ তিনি ছিলেন ন্যায়বিচারের প্রধান রক্ষক। সত্যের প্রতীক। অত্যাচারিতের আশ্রয়স্থল। বিচার বিভাগের অভিভাবক। সুতরাং যেকোনো বিচারে তিনি অসাধারণ। যে ‘ন্যায়দণ্ড’ প্রয়োগ করে তিনি সাধারণ মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন, যে আদেশে জীবন ও মৃত্যুর ফায়সালা করেছেন সেই ন্যায়দণ্ড আজ তারই ওপর আপতিত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। একই সাথে সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহাসহ আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিচারের ঘটনা এই প্রথম। এস কে সিনহা কোথায় অবস্থান করছেন তা নিশ্চিত নয়। আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় না পেয়ে কানাডায় প্রবেশ করেছিলেন। সূত্র বলছে, তিনি কানাডা বা অস্ট্র্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। দেশের এক সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী ব্যক্তিত্ব সিনহার ভাগ্যবিপর্যয় শুরু হয় ২০১৭ সালে। ঘটনার কারণ, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ওই সংশোধনী আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনী দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়। ওই সময় প্রধান বিচারপতি হিসেবে তার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে সরকারের সাথে টানাপড়েন শুরু হয়। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সিনহার পদত্যাগের দাবি ওঠে। অনেক মানুষ মনস্তাত্ত্বিকভাবে সিনহার পক্ষ নেয়। বিএনপি সরকারবিরোধী রায়কে স্বাগত জানায়। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা- অবশেষে প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর। এরই মধ্যে কূটকৌশলে তার পদত্যাগপত্র আদায় করা হয়। ঘটনার শেষ এখানেই নয়। যে সরকারের দৃঢ় আস্থায় তিনি বিচারের সর্বোচ্চ পদ পেয়েছিলেন তারাই তাকে দুর্নীতিবাজ বলে চিহ্নিত করে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুদকের সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মামলার বিবরণ দিয়েছেন। তার ভাষায়, চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ ১১ জন। এর মধ্যে আট আসামি পলাতক, দুইজন জামিনে এবং একজন কারাগারে রয়েছেন। অপর দিকে আসামিপক্ষের বক্তব্য : যে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। আইন অনুযায়ী, সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে সিনহার দুই আপনজন শাহজাহান এবং নিরঞ্জন সাহা ঋণের আবেদন করেন। ফারমার্স ব্যাংকে ওই আবেদন করা হয়। যে টাকা তারা লোন চেয়েছিলেন সেই টাকার বিপরীতে ব্যাংকের কাছে সম্পত্তি বন্ধক রাখা আছে। তারা ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চার কোটি টাকার বিপরীতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। দুদকের বক্তব্য : ভুয়া তথ্য দিয়ে ফারমার্স ব্যাংক যা বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক নামে অভিহিত তা থেকে সরাসরি সিনহার নামে না নিয়ে অন্যের নামে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরে তা প্রধান বিচারপতির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। ফারমার্স ব্যাংকের মালিক মহিউদ্দিন খান আলমগীর ওই চার কোটি টাকা সিনহাকে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ভুয়া ঋণ নেন। আবার একই দিন পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেন। ওই টাকা থেকে অস্বাভাবিক নগদে, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্য হিসাবে হস্তান্তর ও রূপান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, বিচারপতি সিনহার দু’জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দু’টি চলতি হিসাব খোলেন। পরদিনই তারা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।
ব্যাংকে হিসাব খোলা ও ঋণের আবেদনপত্রে ওই দু’জনই সিনহার উত্তরার বাসার ঠিকানা ব্যবহার করেন। দুদক আরো বলছে, ঋণ সংক্রান্ত আবেদন দু’টি কোনোরকম যাচাই-বাছাই, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ এবং ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতি না মেনেই শুধু গ্রাহকের আবেদনের ওপর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঋণপ্রস্তাব তৈরি করে হাতে হাতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির কর্মকর্তারাও যাচাই-বাছাই ছাড়াই অফিস নোট তৈরি করে তৎকালীন এমডির অনুমোদন নিয়ে নেন। ফারমার্স ব্যাংকের ঋণনীতি অনুযায়ী, ঋণ দু’টির প্রস্তাব অনুমোদন করার ক্ষমতা এমডির না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ওই অনুমোদনের পরদিনই অনুমোদিত চার কোটি টাকার দুটো পৃথক পে-অর্ডার সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে ইস্যু করা হয়। পরে ওই পে-অর্ডার সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় প্রধান বিচারপতির অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে চেক বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই হিসাব থেকে টাকা তোলা হয়। দুদক বলছে, আইনের চোখে এটি অস্বাভাবিক।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কিছু ব্যক্তিগত তথ্য জানা যাক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি নেন এবং ১৯৭৪ সালে সিলেটে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি হাইকোর্টে এবং ১৯৯০ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ২০০১ সালের শুরুতে বিএনপি সরকার তার নিয়োগ কনফার্ম করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এলে তিনি আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। ইতোমধ্যে তিনি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে ১৭ জানুয়ারিতে একই রাজনৈতিক সরকারের আমলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হন। তিনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একমাত্র সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব যিনি ওই পদে যোগদান করেন। তিনি বিগত বছরের ১১ নভেম্বর বিদেশে থাকা অবস্থায় পদত্যাগ করেন। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার পর তিনি যখন দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং আমেরিকায় আশ্রয় গ্রহণ করেন তখন তিনি একটি বই লেখেন। বইটির নাম ‘এ ব্রোকেন ড্রিম- রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’। তার ওই গ্রন্থটিকে আত্মজৈবনিক বলা যায়। অন্যভাবে একে বলা যায়, ‘দুঃসময়ের দিনলিপি’। গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিচারকদের অভিসংশন করার আইন পাস হওয়া থেকে তার দুর্যোগের সূচনা। আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তার কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার প্রয়াস নেয়। বিচারকদের বিচার করার ক্ষমতার জন্য এর আগে বিধান ছিল ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ বিচারকদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিচার করবে। ওই কাউন্সিলের প্রধান হবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। আরো দু’জন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এর সদস্য থাকবেন। সিনহার বিবেচনায় এ ব্যবস্থার ফলে উচ্চ আদালত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। জাতীয় সংসদের ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে একদল সংক্ষুব্ধ নাগরিক হাইকোর্টে আবেদন করেন। ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ জাতীয় সংসদের ওই প্রস্তাবনাকে ‘সংবিধানবিরোধী’ বলে নাকচ করে দেয়। ওই রায়ের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব বিচারকদের সম্পর্কে অন্যায় ও অশালীন মন্তব্য করে। হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের তরফ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সমন্বয় একটি বিশেষ অধিবেশন বসে। ওই অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়। তার মানে হলো, জাতীয় সংসদে উত্থিত ওই প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে উচ্চ আদালত প্রত্যাখ্যান করে। ওই প্রস্তাব দেশে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি করে। বিচারপতি সিনহা তার লিখিত গ্রন্থে পুরো বিষয়টিকে নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের অসৎ উদ্দেশ্য বলে বর্ণনা করেন। বিচারপতি সিনহা স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী ঘরানার আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। তার পদ ও পদোন্নতিই এর প্রমাণ। আওয়ামী লীগ সরকার তার মতো একজন সংখ্যালঘু ব্যক্তিত্বকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে চেয়েছে। অপর দিকে বিচারপতি সিনহা স্বাভাবিক আনুগত্য রেখেই বিচার বিভাগকে সমুন্নত রাখতে চেয়েছিলেন। কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দলের প্রবণতা হচ্ছে সবকিছুকে দলীয় বলয়ে স্থাপন। এ উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে সিনহার স্বাধীন অবস্থান সরকারের পছন্দ হয়নি। এস কে সিনহা তার গ্রন্থে সরকারের ওই বৈরী আচরণের প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়। ওই সময় এত দিনের আস্থাভাজন সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে কঠিন ও কঠোর শব্দাবলি উচ্চারণ করে। তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়। গোটা দেশে আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করে। সিনহাকে তার সরকারি বাসভবনে একরকম ‘গৃহবন্দী’ করা হয়। আইনজীবী, বিচারপতি এবং সাংবাদিকদের তার বাসভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, তিনি অসুস্থ এবং চিকিৎসাজনিত ছুটিতে রয়েছেন। আরো বলা হয়, অতি শিগগিরই তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর তাকে বিদেশে যেতে বাধ্য করা হয়। যাওয়ার মুহূর্তে তিনি গণমাধ্যমের প্রতি একটি বিবৃতি ছুড়ে দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই এবং চিরদিনের জন্য দেশত্যাগও করছি না’। কিন্তু তার পরিবারের প্রতি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কথিত গোয়েন্দা সংস্থা নানা কারসাজি করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে বলে প্রকাশিত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থে একটি বড় অধ্যায়জুড়ে তিনি সরকারকে সহায়তার বিশদ বিবরণ দেন। এর মধ্যে রয়েছে- ক. মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল; খ. বঙ্গবন্ধু হত্যা ট্রাইব্যুনাল; গ. শত্রুসম্পত্তি আইন; ঘ. রাজস্ব আহরণ; ঙ. আইনসভার অদক্ষতা দূরীকরণ; চ. ঋণখেলাপি মোকাবেলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে মূল্যবান সহায়তা। অবশেষে তিনি তার চরিত্র হননের জন্য শাসকদলের তীব্র সমালোচনা করেন। তাকে নানাভাবে অপমান-অপদস্থ করার নানা ঘটনার উল্লেখ করেন।
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। তা বিচারপতি বা রাষ্ট্রপতি যেই হোক না কেন! কিন্তু আইন যদি একদেশদর্শী হয় এবং ভিন্নমত দমনের স্বার্থে ব্যবহার করা হয় তাহলে তা কাম্য হতে পারে না। বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলা এবং নিগ্রহমূলক কার্যকলাপের একমাত্র কারণ : ‘ব্যক্তি কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ’। তিনি এভাবেই গ্রন্থের উপসংহার টানেন। ন্যায় ও অন্যায়ের সীমা-পরিসীমা আমাদের জানা নেই। কিন্তু ‘আমি যে দেখেছি গোপন হিংসা কপট রাত্রিছায়ে/হেনেছে নিঃসহায়ে/ আমি যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে/বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’ আমরা বিশ^াস করি, আজ হোক কাল হোক নিরেট সত্যের প্রকাশ ঘটবেই। ‘ট্র্রুথ শ্যাল প্রিভেইল’।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]