করোনাভাইরাস : কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল কমানোর প্রক্রিয়া শুরু

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশে করোনা শনাক্তের হার কমেনি। গতকালও প্রায় ২১ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। অথচ করোনার জন্য নির্ধারিত (ডেডিকেটেড) হাসপাতাল বন্ধ করা শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি এ ব্যাপারে কোনো পরামর্শ দেয়নি। তাদের কাছ থেকে পরামর্শও নেয়া হয়নি। এর মাধ্যমে ভুল বার্তা দেবে বলেও মনে করেন তারা। করোনা মোকাবিলায় ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা ছিল ২২টি। এই তালিকায় কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালটিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ৩০টি সাধারণ শয্যা ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৬ই আগস্টের করোনা সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায়, করোনার জন্য নির্ধারিত কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালটি বন্ধ করা হয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও গত ১৫ই আগস্ট থেকে করোনা রোগী ভর্তি সংকুচিত করা হয়েছে। আগামী ২১শে আগস্ট শনিবার থেকে হাসপাতালটি আর কোভিড (ডেডিকেটেড) হাসপাতাল থাকছে না বলে জানিয়েছেন পরিচালক।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, সরকারের নির্দেশে গত ১৫ই আগস্ট শনিবার থেকে তারা করোনা রোগী ভর্তি সংকুচিত করেছেন। আগামী শনিবার (২১শে আগস্ট) থেকে হাসপাতালটি কোভিড (ডেডিকেটেড) থাকছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এটি নন-কোভিড হয়ে যাবে। যেসব করোনা রোগী এখানে ভর্তি আছেন তাদেরকে অন্যত্র রেফার করা হবে। তিনি আরো জানান, আইসোলেশন থাকবে। কারণ কোনো সন্দেহ রোগী আসলে আইসোলেশনে রাখা হবে। পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে এখানে ভর্তি। পজেটিভ হলে অন্যত্র পাঠানো হবে। হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে পরামর্শক কমিটি থেকে কোনো পরামর্শ নিয়েছে কিনা-জানতে চাইলে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। পরামর্শক কমিটি হাসপাতাল বন্ধের ব্যাপারে পরামর্শও দেয়নি। অন্যদিকে সরকার বলছে, কোভিড হাসপাতালের সিট খালি রয়েছে, সেগুলোকে নন-কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হবে। এতে ধারণা হবে, আমাদের বোধহয় সব মিটে গেছে। এতে করে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ যেসব স্বাস্থ্যবিধিতে সাধারণ মানুষ অভ্যন্ত হয়েছিল, সেগুলোতে ঢিলেমি আসবে। তিনি সাবধান করে বলেন, আমেরিকা, ইতালি, যুক্তরাজ্যে রোগী কমে যাওয়ার পর তাদের প্রস্তুতিতে, প্রতিরোধ কার্যক্রমে কিছুটা শিথিলতা এনেছিল। এ কারণে সেখানে সেকেন্ড ওয়েভ এসেছে। আর আমাদের দেশে যদি সে রকম হয়, তাহলে কিন্তু আমরা অসুবিধায় পড়ে যাবো। রাজধানীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো হচ্ছে-উত্তরা কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ, পুরান ঢাকার বাবুবাজারে মহানগর হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্টোলিভার হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুড়িল বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আসগর আলী হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, এভার কেয়ার (এ্যাপোলো) হাসপাতাল ও ইম্পালস হাসপাতাল।
সূত্র জানায়, কোভিড চিকিৎসা তুলে নেয়ার প্রাথমিক তালিকাতে রয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইনস্টিটিউট, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল। গত ১৩ই আগস্ট সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ায় এই মাসের শেষদিকে অনেক কোভিড-১৯ হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হবে। বর্তমানে কোভিড হাসপাতালের ৭০ শতাংশ সিট খালি। তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ কমে আসছে। করোনার বাইরে যে নন-কোভিড রোগী আছে, করোনার কারণে তারা সেভাবে চিকিৎসা পায়নি। আমরা আগামীতে অনেকগুলো হাসপাতাল নন-কোভিড করে দিচ্ছি, এ মাসের শেষে। এখানে সবাই চিকিৎসা নিতে পারবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মনে করেন দেশে আতঙ্ক তেমন নেই। যে কারণে রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, করোনার জন্য সারা দেশে ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট ১৫ হাজার ৭৯৯টি শয্যা রয়েছে। এখন এরমধ্যে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৬২৫ জন রোগী। আর শয্যা ফাঁকা আছে ১১ হাজার ১৭৪টি। এরমধ্যে রাজধানীতে ২১টি হাসপাতালে শয্যা ৭ হাজার ৩৪৩টি। ফাঁকা রয়েছে ৯ হাজার ৯১০টি।