সুন্দরবনে ৭ চোরা শিকারি ও ৯ জেলে আটক

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ সুন্দরবনে বন বিভাগের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও চোরা শিকারিদের উৎপাত বাড়ছেই। বিশেষ করে মাছ ধরার নামে বনে ঢুকে হরিণ ধরার ফাঁদপাতা চোরা শিকারিদের থামানোই যাচ্ছে না। হরিণ শিকারের প্রস্তুতিকালে সাত শিকারিকে আটক করেছে বন বিভাগ। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের পক্ষীরচর থেকে তাদের আটক করা হয়। এসব শিকারির কাছ থেকে অত্যাধুনিক একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, ২০০ হাত নাইলনের দড়ির ফাঁদ, ২০০ হাত ইলিশের জালসহ হরিণ শিকারের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট ইলিশ শিকারের অনুমতি নিয়ে অভয়ারণ্যে এসে মাছ ধরা ও হরিণ শিকারের ধান্দায় থাকা ৯ জেলেকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ সময় এক কিশোরকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। শনিবারে আটক শিকারিরা হলেন, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামের মুনসুর বিশ্বারের ছেলে মো. ইব্রাহীম বিশ্বাস (৪০), ইব্রাহীম বিশ্বারের ছেলে ইউনুছ বিশ্বাস (১৮), ইসমাইলের ছেলে মো. মোস্তফা (৩০), তালুকচরদুয়ানী গ্রামের হাবিব মোল্লার ছেলে রাজু মোল্লা (২৫), উত্তর কাঁঠালতলী গ্রামের আ. হামিদের ছেলে ইলিয়াস (৩০), সায়েরাবাদ গ্রামের আ. হকের ছেলে শুকুর আলী ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার নলী গ্রামের সালাম কাজীর ছেলে মো. জাকির কাজী (৩৮)।
পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সুন্দরবনে সংঘবদ্ধ একটি হরিণ শিকারি চক্র প্রবেশ করার গোপন সংবাদ পায় বনরক্ষীরা। ভোর পাঁচটার দিকে জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাদিক মাহদুদের নেতৃত্বে বনরক্ষীরা পক্ষীরচরে অভিযান চালায়। এ সময় ওই চরের একটি খালের মধ্যে ট্রলারটি দেখতে পেয়ে তারা চ্যালেঞ্জ করলে ট্রলারে থাকা জেলে ছদ্মবেশী শিকারিরা বন বিভাগের কোনও পাস-পারমিট দেখাতে না পারায় তাদের আটক করা হয়। এসিএফ আরও জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা হরিণ শিকারের উদ্দেশে বনে প্রবেশের কথা স্বীকার করে। বনরক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা পাথরঘাটা উপজেলার জ্ঞানপাড়া এলাকার হরিণ শিকারি চক্রের গডফাদার মালেক গোমস্তার দলের সদস্য বলেও স্বীকার করেছে। শিকারিদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে, বন বিভাগের কাছ থেকে ইলিশ আহরণের জন্য সাগরে যাওয়ার পারমিট নিলেও অনেক জেলে সরাসরি সাগরে না গিয়ে সুন্দরবনের ভেতরে অভয়ারণ্যেই মাছ শিকার ও একইসঙ্গে হরিণ শিকার করছে। গত ৮ আগস্ট অনুমতি পাওয়া ১০ জনের একটি দলকে এ অবস্থায় আটক করে ১০ আগস্ট এদের ৯ জনকে জেলহাজতে পাঠান কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম। অপর সদস্য কিশোর থাকায় তাকে তার অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও ওইদিন কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে তাকে কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রে ফিরিয়ে নিয়ে যান ওসি। চারদিন পর স্থানীয় একজন ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে ইমাম হোসেন নামের ওই কিশোরকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। যদিও ওই কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে গত ১৪ আগস্ট তাকে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তার শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক।