পুলিশের ভাবমর্যাদা রক্ষা করুন

0

টেকনাফের পুলিশ চেকপোস্টে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার পর দেশের পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ও ভাবমর্যাদা বড় ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। যদিও একজন অপরাধী ওসি বা ব্যক্তিবর্গের অপরাধের দায় পুরো পুলিশ বাহিনীর উপর বর্তায় না। দেশের পুলিশ বাহিনীর দুই লক্ষাধিক সদস্যের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ণ ও অপরাধ প্রবণ পুলিশ সদস্যের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তারা বাদে বাকি সব পুলিশ সদস্য দেশের জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। গুটি কতেক পুলিশ সদস্যের মধ্যে হাতে গোনা কিছু সংখ্যক ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে। পুলিশ বাহিনীর ভাবমর্যাদা রক্ষা এবং এই বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস জোরালো করার স্বার্থেই এসব অপরাধি পুলিশ সদস্যদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার পর ক্রসফায়ারের নামে টেকনাফের সেই ওসি প্রদীপ কুমার দাশের হাতে অসংখ্য খুন, চাঁদাবাজিসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেই সাথে তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ অপরাধি চক্র এবং তাদের মদতদাতাদের নামও উঠে আসছে। ইতিমধ্যে এসব ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর পোশাক ও অস্ত্র ব্যবহার করে ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকা সদস্যদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার মূল দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর।
ঈদের আগের রাতে টেকনাফের মেরিনড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে মেজর(অব.)সিনহা নিহত হওয়ার পর থেকে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম হয়ে উঠেছে। কোটি মানুষের কণ্ঠে এখন মেজর সিনহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার এবং অপরাধিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি। সেই সাথে গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের স্থানীয় কর্মকর্তাদের ভয়ঙ্কর সব অপরাধের আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রদীপ-লিয়াকত ছাড়াও পুলিশ বাহিনীতে আরো অনেক অপরাধি সদস্য রয়েছে তা এখন আরো স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। গতকাল প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদে চোখ রাখলে দেখা যায়, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আখাউড়ার ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫ পুলিশের অর্থ আদায়ের অভিযোগ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি অফিসের একজন পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন জনৈক ব্যবসায়ী। অপরাধি-চাঁদাবাজ পুলিশের বিরুদ্ধে এভাবে মামলা হলে এবং আইনগত প্রক্রিয়ায় শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হলে পুলিশ বাহিনীতে ওসি প্রদীপ কুমারের মত সিরিয়াল কিলার ও দুর্বৃত্তদের অস্তিত্ব থাকত না। তথাকথিত বিভাগীয় শাস্তির নামে গুরুপাপে লঘুদন্ডের কারণেই অপরাধী পুলিশ সদস্যরা এমন বেপরোয়া হয়ে উঠার সাহস পেয়েছে। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা, জননিরাপত্তা এবং পুলিশের ভাবমর্যাদা একই সুত্রে গাঁথা। পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা এসব অপরাধি পুলিশ সদস্যকে বাহিনী থেকে বিতাড়িত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে ব্যাপক আতঙ্ক ও গণ-উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি সেবাপরায়ণতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। করোনাক্রান্ত এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে খাবার সামগ্রি পৌছে দেয়া, করোনা রোগীদের হাসপাতালে পৌছে দেয়া থেকে শুরু করে আত্মীয়-পরিজনের ফেলে যাওয়া লাশ দাফনের কাজেও পুলিশকে সক্রিয় থাকতে দেখা যাচ্ছে। এসব কাজ করতে গিয়ে হাজার হাজার পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। কিছু সংখ্যক ভয়ঙ্কর অপরাধি, অর্থগৃধ্লু পুলিশ সদস্যদের কারণে পুলিশের লাখা লাখ নিরলস-পেশাদার সদস্যের কৃতিত্ব ও ত্যাগ ম্লান হয়ে যেতে পারে না। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক( আইজিপি) পুলিশ বাহিনীকে দুর্নীতিমুক্ত ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আইজিপি ড. বেনজির আহমেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। পুলিশ বাহিনীতে এমন আরো অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্র রয়েছেন, যারা পুলিশের ভাবমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট। পুলিশের হাতে মেজর সিনহা মোহাম্মদ হত্যার ঘটনা এই মুহূর্তে টক অব দ্য কান্ট্রি। সবাই সিনহা হত্যার দ্উত বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তুলেছেন। এই হত্যার সুষ্ঠু বিচারে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্বাত্মক সহায়তার মধ্য দিয়ে পুলিশের প্রতি মানুষের সংশয় দূর করে আস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।