উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা সৌদি আরামকোর

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর জের ধরে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরমকো। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রেকর্ড দরপতনের কারণে প্রতিষ্ঠানটির অর্ধবার্ষিক মুনাফায় পতন দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মূলধনী ব্যয় কমানোর কথা জানিয়েছে আরামকো। একই সঙ্গে আগামী বছরগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ পরিকল্পনা সৌদি আরামকোকে সংকট উত্তরণে সাময়িক সহায়তা করলেও আন্তর্জাতিক বাজার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
    চলতি সপ্তাহের শুরুতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এ জ্বালানি প্রতিষ্ঠানটি অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন ঘোষণা করেছে। প্রতিবেদনে আরামকো জানিয়েছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ২ হাজার ৩২০ কোটি ডলার মুনাফা অর্জিত হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে জ্বালানি প্রতিষ্ঠানটি ৪ হাজার ৬৯০ কোটি ডলার মুনাফা করেছিল।
    চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে সৌদি আরামকো। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড ৭৩ শতাংশ কমে গেছে। গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সৌদি আরামকোর মুনাফা হয়েছে সাকল্যে ৬৬০ কোটি ডলার। আগের বছরের একই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার মুনাফা করেছিল। মুনাফায় এমন পতনের পেছনে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাস, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির রেকর্ড দরপতন এবং ওপেক প্লাস জোটের আওতায় বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাস চুক্তির শর্ত মেনে চলাকে চিহ্নিত করেছে সৌদি আরামকো।
    প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেয়ারহোল্ডার ও খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সৌদি আরামকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমিন নাসের বলেন, করোনাকালে ভীষণ রকমের অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে সৌদি আরামকো। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যয় কমানো ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানো।
    করোনা মহামারীর শুরুর দিকে সৌদি আরামকোর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, করোনা মাহামারীর ধাক্কা সামলে উঠতে সৌদি আরামকোর বার্ষিক ব্যয় ৪ হাজার কোটি থেকে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত কমানো হতে পারে। তবে আমিন নাসের সম্প্রতি বলেছেন, ব্যয় কমানোর এ হার আগের মতো থাকবে না, বরং কমিয়ে আনা হবে। তবে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার কথা জানাননি তিনি।
    অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন সক্ষমতার বিষয়ে আমিন নাসের বলেন, ব্যয় কমানোর পাশাপাশি আগামী দিনগুলোয় আয় বৃদ্ধিতে নজর দেবে সৌদি আরামকো। এজন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন সক্ষমতা (ম্যাক্সিমাম সাসটেইনেবল ক্যাপাসিটি) ১ কোটি ২০ লাখ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করা হবে। দুই বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এটা করা হবে।
    তিনি আরো বলেন, দেশে দেশে লকডাউনের কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় রেকর্ড পতন দেখা দেয়। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকটা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে অনেক দেশ লকডাউন থেকে বেরিয়ে এসেছে। গতি ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতিতে। এটা খুবই আশার কথা। ফলে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে বাজার পরিস্থিতি আগের তুলনায় চাঙ্গা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আরামকোর মুনাফায় পতন ঠেকানোও সম্ভব হবে।
    তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে উন্নীত করতে সৌদি আরব প্রভাবশালী একটি পক্ষ। দেশটি ওপেক প্লাসের আওতায় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন হ্রাস চুক্তির শর্ত মেনে চলছে। এ পরিস্থিতিতে সৌদি আরামকোর উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা জ্বালানি তেলের বাজারকে ফের মন্দার মুখে ফেলতে পারে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কণ্টকাকীর্ণ পথকে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারে।
    রয়টার্স, অয়েলপ্রাইসডটকম ও অ্যারাবিয়ান বিজনেস অবলম্বনে